অনাকাঙ্খিত কারণবশত বাংলাদেশের এবং সমগ্র বাংলাভাষী যৌন সংখ্যালঘু এবং তাদের শুভানুধ্যায়ীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত বৈচিত্র্য নামের তথ্য ও সৃজনশীলতা ভিত্তিক জালপাতা আমার একার পক্ষে আর রক্ষণাবেক্ষণ ও চালানো সম্ভব নয় বলে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমি এই পাতাটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু সেটার স্মৃতি মুছে যাওয়ার নয়। অনেক মানুষের স্বপ্ন ও আকাঙ্খা সেখানে পরিস্ফুটিত হয়েছিল। পাতাটির সূচনা হিসেবে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে লেখা “সম্পাদকের বক্তব্য” প্রচ্ছদটি এখানে হুবুহু উঠিয়ে দিলাম।

রিয়াজ ওসমানী

২ ফেব্রুয়ারী ২০২১

ধরুন আপনি সমাজের অধিকাংশ মানুষদের মতোই বিষমকামী অর্থাৎ বিপরীত লিঙ্গের মানুষদেরকে যৌনভাবে পছন্দ করেন এবং তাদেরই প্রেমে পড়েন। হঠাৎ দেশে আইন পাস করা হলো যে আপনার মতো মানুষদের এখন থেকে সমলিঙ্গের কাউকে বিয়ে করতে হবে এবং তার সাথেই বাকিটা জীবন কাটাতে হবে। আপনি কি পারবেন কোনও প্রকার চিকিৎসা, দোয়া দরুদ, ঝাড় ফুক, যাদুটোনা বা ধ্যান করে নিজেকে বদলে নিতে যাতে সেই মানুষটার সাথে আপনি যৌনভাবে মিলিত হতে পারেন এবং তাকে ভালোবেসে তার সাথে বাকিটা জীবন কাটাতে পারেন? ব্যাপারটা আপনার কাছে আজগুবী এবং কিঞ্চিৎ বিরক্তিকর মনে হচ্ছে না? পুরুষ হয়ে আরেক পুরুষের সাথে যৌন কারবারের প্রতি কিঞ্চিৎ ঘৃণা প্রকাশ করছেন না? এক মহিলা হয়ে আরেক মহিলার সাথে যৌন কারবারকে কি মনে হচ্ছে আপনার? পারবেন এসব করতে? না, পারবেন না। আপনি যেহেতু একজন বিষমকামী মানুষ, আপনার পক্ষে তা কখনোই করা সম্ভব হবে না। জন্মসূত্রে পাওয়া আপনার যৌন প্রবৃত্তি আপনাকে কখনোই সেটা সহজে ও আনন্দে করতে দেবে না।

এখানে বর্ণিত চিত্রটি আপনি সঠিকভাবে কল্পনা করতে পারলে এর উল্টাটাও অনুধাবন করতে পারবেন। কল্পনা করুন কিছু মানুষ আছে যারা বিপরীত লিঙ্গের কাউকে যৌনভাবে পছন্দ করে না, প্রেমে পড়া তো দুরের কথা। তারা শুধু সমলিঙ্গের মানুষদের প্রতিই যৌনভাবে আকৃষ্ট হয়, ছোটবেলা থেকে তাদেরই প্রেমে পড়ে হৃদয়বিদারক কল্প-কাহিনীর নায়ক হয়। অথচ সমাজের রীতি এবং দেশের আইন তাদেরকে বলে যে তাদেরকে বিপরীত লিঙ্গেরই কাউকে বিয়ে করে সংসার করতে হবে। তাদের উপায়টা কি সেটা এখন বলতে পারবেন? সমাজ, ধর্ম ও পরিবার তাদেরকে শিখাচ্ছে একটা অথচ তারা নিজেরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে যে তাদের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার ঠিক আরেকটা। এবার বলবো যে এরা কেউ আপনার কল্পনার ফানুস নয়। এরা সত্যিকারেরই রক্ত-মাংসের মানুষ। এরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আপনার জানাশোনা মানুষদের মধ্যেই। আপনারই কোনও এক বন্ধু, শিক্ষক, ভাইবোন বা দুর সম্পর্কের আত্মীয় একজন সমকামী, অর্থাৎ জন্মসূত্রে পাওয়া তার যৌন প্রবৃত্তির কারনে সে ছেলে হয়ে ছেলেদেরকেই সেইভাবে ভালোবাসে, মেয়ে হয়ে মেয়েদেরকে।

এবার হয়তো বলবেন যে এটা কি করে সম্ভব? এটা তো প্রকৃতি বিরুদ্ধ। আর সবাই এরকম হলে আমরা মানব প্রজাতি হয়ে বংশ বিস্তারই বা করবো কি করে? ভলো বলেছেন। যেটা হয়তো আপনার জানা নেই সেটা হচ্ছে যে সবাই সমকামী হয়ে যাওয়ার কথা হাস্যকর। আদিকাল থেকেই পৃথিবীর ৫ থেকে ১০ শতাংশ মানুষ বিষমকামীদের যৌন প্রবৃত্তির চেয়ে ভিন্ন কিছু নিয়ে জন্মগ্রহণ করে আসছে এবং বর্তমান দুনিয়াতেও এর শতকরা হার বেড়ে যাওয়ার কোনও হদিস নেই। যেটার হদিস আছে তা হলো যে বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর সব দেশেই সমকামী, উভকামী, রূপান্তরকামী, প্রভৃতি মানুষ – যারা সমষ্টিগতভাবে যৌন সংখ্যালঘু হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয় – তারা বিরাজমান কিন্তু সমাজের অন্তরালে। নিজেদের যৌন প্রবৃত্তিকে আড়ালে রেখে এরা আপনার মত চালচলনের অভিনয় করে। অর্থাৎ পরিবার ও সমাজের চাপে বিপরীত লিঙ্গের কাউকে বিয়ে করে বসে থাকে এবং বাকিটা জীবন ভালোবাসাবিহীন একটা বিয়েতে আবদ্ধ হয়ে নিজের ও অন্য মানুষটার জীবনের সর্বনাশ করে ফেলে। আনন্দ ব্যতিত যৌন কর্মের ফলের এদের হয়তো সন্তান জন্ম দেয়ারও সুযোগ হয়। কিন্তু সেই দুইটা জীবন থেকে যায় অপরিপূর্ণ এবং মিথ্যে।

আপনার কি বিশ্বাস হচ্ছে যে এরা আদৌ আছে কি না? বা থাকলেও তাদের যৌন প্রবৃত্তি কি বদলানো যায় না? এই ৫-১০ শতাংশ মানুষকে প্রকৃতি বা সৃষ্টিকর্তা তৈরি করলেনই বা কেনো? আর কষ্ট করে সন্তান জন্ম যদি দেয়াই যায় তাহলে বিপরীত লিঙ্গের কাউকে বিয়ে করতে ক্ষতি কি? আর ধর্ম যেখানে ব্যভিচারের বিরুদ্ধে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সেখানে এই সব কথাবার্তা বলাও তো হারাম। দু’টা মানুষের মধ্যে যৌন কারবার তো একটা বিবাহিত নারী ও পুরুষের মধ্যেই হতে পারে। অবিবাহিত নারী ও পুরুষের মধ্যেও নয়, দুই পুরুষ বা দুই নারীর মধ্যে তো দুরের কথা। সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে যদি প্রচলিত বিবাহ জীবন ব্যতিত মানুষদের মধ্যে যৌন মিলন হয়। সমাজের সুশৃংখলা নষ্টের পাশাপাশি ধর্মের এতো বড় অবমাননা আমরা সইবোই বা কি করে? আমরা তো সবাই একবাক্যেই জানি যে ইসলাম এবং অধিকাংশ ধর্মেই সমকামিতা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

আসুন এবার এই ব্যাপারগুলো একটু খতিয়ে দেখি। প্রথমত এরা আদৌ আছে কি না এই নিয়ে আপনার সংশয় থাকলে কিছু করার নেই। তবে এইটুকু বলতে পারি যে এরা না থাকলে এই ওয়েবপাতাটি তৈরি করার কোনও প্রয়োজন হতো না! তাই বাকি কথায় আসি। আসি যৌন প্রবৃত্তি নিয়ে। পশ্চিমা দুনিয়ায় বিগত কয়েক দশকের গবেষনার ফলে প্রমানিত হয়েছে যে কারও যৌনতা বদলানো যায় না। আপনারটাও যেমন বদলানো যাবে না, ঠিক তেমনি সমকামীদের যৌনতাও বদলানো যাবে না। এই ব্যাপারে আমাদের “তথ্য ভান্ডার” বিভাগে অনুবাদকৃত লেখাগুলো পড়ে নেবেন। কোনোভাবেই যদি যৌনতা বদলে নেয়া না যায়, তাহলে তার দরকারটাই বা কি বলুন? আর মার্কিন সাইকোলজিকাল এসোসিয়েসন অনেক আগেই পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে যে সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষন সৃষ্টিকারী যৌন প্রবৃত্তি অর্থাৎ সমকামিতা কোনও মানসিক বা শারীরিক রোগ নয়। এটা স্বাভাবিক যৌনতারই একটা বহিঃপ্রকাশ। এই ক্ষেত্রে একটি মাত্র ভিন্নতা ছাড়া পরীক্ষিত মানুষেদের মধ্যে আর কোনও পার্থক্য দেখা যায় নি। তাই সমকামিতা যদি কোনও রোগ বালাইয়ের মধ্যে নাই পড়লো, তাহলে এর চিকিৎসার প্রশ্নই বা আসলো কি করে?

আমাদেরকে তাহলে প্রকৃতি বা সৃষ্টিকর্তা তৈরিই বা করলেন কেনো? এটার উত্তর আমাদের জানা নেই। আদৌ জানতে পারবো কি না সেই ধারণাও নেই। কিন্তু আমরা যে জন্মগ্রহণ করেছি তা জানি। প্রকৃতি আমাদের তৈরি করলে আমরা প্রকৃতিরই অংশ এবং যেহেতু আমাদের যৌনতা জন্ম থেকেই নির্ধারিত, সেহেতু সেই যৌনতা অর্থাৎ সমকামিতাও প্রাকৃতিক অর্থাৎ একেবারেই প্রকৃতি বিরুদ্ধ নয়। আর আমরা যদি বিশ্বাস করি যে প্রকৃতি ব্যতিত অন্য কোনও সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তাহলে তিনি কেনো করেছেন সেটার উত্তর তাঁর কাছ থেকেই জেনে নেবেন। আমরা জানি যে আমরা এই পৃথিবীতে আছি।

বিয়ে করার একমাত্র উদ্দেশ্য যদি সন্তান জন্ম দেয়াই হতো তাহলে যে সকল বিষমকামী দম্পতি তাদের নিজেদের কারণে বাচ্চা নিতে অক্ষম, তাদের বিবাহ অবৈধ। কিন্ত সেভাবে তো কোনও দিন ভেবেছেন বলে মনে হয় না। আর আধুনিক উপায়ে সমকামী যুগলদের সন্তান নেয়া এখন আর অসম্ভব কিছুই না। তার উপর এই দুনিয়ায় এতো এতিম শিশুগুলোর মধ্যে কেউ কেউ সমকামী দম্পতিদের ঘরে ও হৃদয়ে ভালোবাসা ও আশ্রয় পেলে এতে কি দুনিয়ারই লাভ নয়? কিন্তু বিয়ের উদ্দেশ্য যে শুধু সন্তান জন্ম দেয়া, তা হতে পারে না। এটার উদ্দেশ্য অবশ্যই হওয়া উচিৎ একজন আরেকজনকে ভালোবেসে তার সাথে বাকি জীবনটা কাটানোর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করা। এখানে সন্তান না আসলেও সেই ভালোবাসায় কোনও কমতি থাকতে পারে না। ঠিক একই সূত্র ধরে বলা যায় যে যৌন মিলন একমাত্র গর্ভধারণের জন্য না। যৌন মিলনের আরেক উদ্দেশ্য একজন আরেকজনকে আনন্দ দেয়া, সেই আনন্দ দিয়ে তার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা। আর নিছক আনন্দের জন্যে প্রাণীরা যেমন যৌন মিলনে আবদ্ধ হয়, তেমন মানুষরাও তাই হয়। প্রসঙ্গক্রমে এখানে বলতেই হবে যে প্রাণী জগতে সমকামিতা প্রবল। অনেকেই অজ্ঞতার কারনে এই কথা অস্বীকার করে।

এবার ধর্ম টানবেন নিশ্চয়ই! চলুন দেখি ধর্ম কি বলে। খৃষ্ট ধর্মের মত ইসলাম ধর্মেও লুত (আঃ) এবং সডম ও গোমোড়াহ শহরের কথা বলা আছে। সনাতন চিন্তা-ভাবনা অনুযায়ী সমকামিতার কারনে আল্লাহ এই নগর ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাই ইসলামে সমকামিতা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু এই বিবরণটা আরেকটু খতিয়ে দেখলে দেখবেন যে এই ঘটনা নিয়ে বিতর্ক আছে। পশ্চিমা অনেক মুসলমানরা গবেষণা করে বলেছেন যে সডম ও গোমোড়াহ ধ্বংস করে দেয়ার পেছনে সমকামিতা কারণ হিসেবে ছিল না, ছিল পুরুষ ধর্ষণ। লুত (আঃ) এর কাছে অথিতি হিসেবে একটি রাতে মানব রূপ নিয়ে দুইজন ফেরেস্তা আসেন। লুত (আঃ) তাদেরকে মেহমান হিসেবে গ্রহণ করলেও সেই রাতে সেই নগরীর কিছু পুরুষরা তাদের সাথে অনিচ্ছাকৃত যৌন মিলনে আবদ্ধ হয় যা ধর্ষণের সামিল। সৃষ্টিকর্তা এতে অসন্তুষ্ট হয়ে সেই নগরীকে ধ্বংস করে দেয়। এই থেকেই ইসলাম ধর্মে সমকামীদের প্রতি বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। তবে কোরান শরীফে সমকামীদের শাস্তির কোন নির্দিষ্ট বিধান নেই। বিধান খুজে পাওয়া যায় হাদিসের বিভিন্ন গ্রন্থে – অর্থাৎ নবী (সঃ) মারা যাওয়ার দুইশত বছরের পর বিভিন্ন মুসলমান সমাজে সমকামীদের শাস্তির বিধান খুজে পাওয়া যায়। সময়ের সাথে সাথে সেই বিধান আরও কঠোর হয়ে উঠে যার সব চেয়ে জঘন্যতম নিদর্শন আমরা দেখতে পেয়েছি বর্তমান যুগের মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামিক স্টেটে (আই এস) যেখানে সমকামীদের ধরে উঁচু দালান থেকে ফেলে দেয়া হয়েছে।

ভাগ্য ভালো যে বাংলাদেশের আইন কানুন শরিয়া দ্বারা গঠিত নয় এবং আমাদের এই গনতান্ত্রিক এবং তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দেশে কোনও দিন তা হতেও দেয়া যাবে না। কিন্তু আমাদের উপর ইসলামী শাস্তি কামনা করার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? আপনার বিশ্বাস নিয়ে আপনি থাকুন। কিন্তু সমকামীদের উপর আপনার বর্বর শাস্তি প্রয়োগ করার কোনও অধিকার আপনার নেই। আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইসলাম সমকামিতা নিয়ে কি বললো তা দেশের আইন কানুনের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক নয়। কারন দেশের আইন “কমন লও” দ্বারা গঠিত, ধর্মীয় অনুশাসন দিয়ে না। সমাজের অবক্ষয়ের কথা বলবেন এবার নিশ্চয়ই। বলবেন যে আমরা অল্প বয়সের ছেলে মেয়েদের সমকামী বানিয়ে ফেলবো। আমার আগের কথাগুলো পড়ে আশা করি বুঝতে পেরেছেন যে বাচ্চা ছেলে পেলেদের সাথে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন মিলন করলে তাদেরকে সমকামী বানানো যায় না। কারন তাদের যৌনতা (সেটা যেটাই হোক) জন্ম থেকেই নির্ধারিত। আর তাদেরকে যদি অতো সহজেই সমকামী বানানো যেত, তাহলে মাদ্রাসা থেকে বের হওয়া অধিকাংশ ছেলে শিশুরাই সমকামী হয়ে বের হতো। যখন হুজুররা সেই সব শিশুদের বলাৎকার করে, তখন আপনার ইসলাম ধর্ম কই থাকে? আর সমকামিতা আর শিশুকামিতার মধ্যে যে আকাশ-পাতাল তফাৎ সেটাও হয়তো জানেন না। একটার সাথে আরেকটার কোনও যোগাযোগ নেই।

বাংলাদেশের সমাজে ইসলাম ধর্মের অনুশাসন পরিপন্থী আরও প্রচুর অন্যায় বা পাপ হয়। বিবাহ বহির্ভুত বিষমকামীদের সম্পর্ক, নারী ও শিশু নির্যাতন, ঘুষ ও বাটপারী, বিশ্বাসঘাতকতা, গুম, খুন, মানুষকে ঠকানো – এগুলোর তালিকা দীর্ঘ। কিন্তু এসব ব্যাপারে ধর্ম নিয়ে আপনার তেমন কোনও মাথাব্যথা দেখি না, যত খানি দেখি সমকামীদের যৌন মিলন এবং ভালোবাসার কথা উঠলে। শুধু আমাদের বেলায় আপনার ধর্মীয় মূল্যবোধ বাছাইকৃতভাবে বেশি চলে আসে কেনো? আমাদেরকে আমাদের মতো করে থাকতে দিলেই তো পারেন। আমরা কারও ক্ষতি করছি না – আমরা শুধু আমাদের মতো করে বাঁচতে চাচ্ছি, ভালোবাসতে চাচ্ছি, নিজেদের আত্মসন্মান বজায়ে রেখে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাচ্ছি। এতে আপনার এতো বেগ কেনো?

আপনি কি চান যে ধর্ম, সংষ্কৃতি ও পরিবারের কথা মনে রেখে আমরা বিপরীত লিঙ্গের কাউকে বিয়ে করে তার জীবনটা শেষ করে দেই? নিজেদের কথা না হয় বাদই দিলাম। আপনি বাবা হয়ে আপনার মেয়েকে, বা ভাই হয়ে আপনার বোনকে কোনও সমকামী ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাবেন? আপনার সমকামী ছেলে বা মেয়েরা আপনার জোরপূর্বক অনুরোধে বিয়ে বসে বাকিটা জীবন অসুখী থেকে গেলো – এই কি ছিল আপনার বাসনা? মা হয়ে আপনি জোর করে বিয়ে দেবেন দেখে আপনার সমকামী মেয়ে বা ছেলে আত্মহত্যার চিন্তা শুরু করে দিল, এই কি ছিল আপনার আশা? ব্যাপার আপনার যতোই অপছন্দ হোক না কেনো, আমাদের জন্ম যেহেতু হয়েছে, আমাদের বাঁচার অধিকার আছে সুখী হয়ে, নিজের জীবনটা পরিপূর্ণ করে। এবং আপনার অপেক্ষাকৃত আপত্তি থাকা সত্যেও আমরা নিজেদের বদলাতে পারছি না, চাচ্ছিও না, চাবোও না। আমরা আমাদের যৌনতা বেছে নেই নি। এই জীবনটাও বেছে নেই নি। কে স্বেচ্ছায় বেছে নেবে এই জীবন, যেই জীবনে আছে শুধু আপনার, আমাদের পরিবার ও আমাদের সমাজের লাঞ্ছনা? আমাদের জন্মই এইভাবে এবং আমরা বাকি সারা জীবন এভাবেই থাকবো। তাই আমাদেরকে বাঁচতে দিন। একটু ভালোবাসা দিন। একটু সমর্থনসূচক হাত বাড়িয়ে দিন। আমরাও প্রত্যুত্তরে এই দেশ, সমাজ ও আপনাকে অনেক কিছু দিতে পারবো।

*********************

Leave a comment