রিয়াজ ওসমানী

২ ফেব্রুয়ারী ২০২১

বিঃ দ্রঃ এই লেখাটির নিচে দুটি (২) বিশেষ হালনাগাদ রয়েছে।

বিগত ১১ জানুয়ারী ২০২১ তারিখে ক) ডাঃ সৌমেন ভৌমিক যিনি বাংলাদেশে ও বিলেতে একজন মানবাধিকার কর্মী, খ) তাসমিয়া নুহিয়া আহমেদ যিনি বাংলাদেশে একজন আইনজীবী এবং মানবাধিকার কর্মী এবং গ) ডাঃ এস এম সিদ্দিক হোসেইন যিনি “এম্পাওয়ারমেন্ট থ্রু লও অফ দা কমন পিপল (এলকপ)”-এর পরিচালক, সন্মিলিতভাবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের উচ্চ আদালত বিভাগে ২০২১ এর ৫০৫ – এই নম্বরের একটি রিট আবেদন দাখিল করেছেন। এটি একটি জনস্বার্থ মোকদ্দমা এবং এটি এখন এনেক্স কোর্ট ৩৫-এর কাছে হস্তান্তরিত আছে। আপনি এই লেখাটির নিচের দিকে এই আবেদনটির একটি সত্যায়নকৃত অনুলিপির পিডিএফ দেখতে পাবেন।

বাংলাদেশের দন্ডবিধির ৩৭৫ ধারা একজন পুরুষ দ্বারা একজন নারীর ধর্ষণ নিয়ে লিখিত। এখানে একজন নারীর মাধ্যমে আরেকজন নারীর উপর অসন্মতিসূচক যৌন আক্রমণ, একজন পুরুষের উপর আরেকজন নারীর একই অন্যায়, একজন পুরুষের উপর আরেকজন পুরুষের একই কর্ম, এবং একজন রূপান্তরকামীর উপর একজন পুরুষ, নারী বা আরেক রূপান্তরকামীর আক্রমণ নিয়ে কোনও মনোযোগ দেয়া হয়নি। এর ফলে এই ধারায় ধর্ষিত পুরুষ এবং রূপান্তরকামীদের স্বীকার করা হয়নি।

বাংলাদেশের আইনি প্রক্রিয়ায় “ধর্ষণের” সংজ্ঞার একটা বড় ঘাটতি হচ্ছে যে এটির মাধ্যমে শুধু একজন মহিলার সাথে অসন্মতিসূচক যৌন মিলন বোঝানো হয়েছে। এর সাথে ব্যাপার আরও ঘোলাটে করা হয়েছে ৩৭৫ ধারায় উল্লেখ করা “অনুপ্রবেশ” শব্দটি দিয়ে, যার ব্যাখ্যা দেয়া আছে শুধু শিশ্ন দ্বারা যোনির অনুপ্রবেশ হিসেবে। এর ফলে পরিষ্কারভাবে বাচ্চা ছেলে এবং প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদেরকে এই আইনের পরিধি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

২০০০ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নারী ও শিশুদের প্রতিরক্ষা প্রদানের জন্য “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০” নামের একটি আইন পাস করে। এটাকে ২০০৩ সালে সংশোধন করা হয় কিন্তু “ধর্ষণ” শব্দটির সংজ্ঞায় কোনও পরিবর্তন আনা হয়নি, যেখানে সেই শব্দটিকে প্রতিস্থাপন করে “যৌন আক্রমণ” জাতীয় একটি লিঙ্গ নিরপেক্ষ শব্দ বসিয়ে দেয়া উচিৎ ছিল।

এই আইনটি তার চোখে পুরুষ ও রূপান্তরকামীদেরকে অপরাধের শিকার হিসেবে চিহ্নিত করতে একেবারেই ব্যর্থ হয়। অতএব “অনুপ্রবেশ” শব্দটির অর্থটিকে বিস্তৃত করে এর মধ্যে শুধু “যোনি প্রবেশ” অন্তর্ভুক্ত না করে এর সাথে “পায়ু প্রবেশ”, “মুখ প্রবেশ” এবং শরীরের যে কোনও অঙ্গ দিয়ে আরেকজনকে প্রবেশ, অথবা যে কোনও বস্তু দিয়ে আরেকজনকে প্রবেশ – এগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করাটা এখন জুতসই। এটা নিঃসন্দেহে সত্যি যে পুরুষ, নারী বা রূপান্তরকামী দ্বারা উপরে উল্লেখিত অসন্মতিসূচক আক্রমণগুলোর ফলে আরেকজন পুরুষ, নারী ও রূপান্তরকামী মানুষের অভিজ্ঞতাটা একজন মেয়ে শিশু অথবা নারীর অভিজ্ঞতার মতো সমানভাবে পাশবিক এবং অতিশয় বেদনাদায়ক।

বাংলাদেশে অধিকাংশ শিশু যৌন অত্যাচারগুলোর অনুপ্রবেশগুলো “শিশ্ন-যোনি প্রবেশ” নয়। তথাপি, আইন প্রশাসনের কাছে এটা ব্যাপকভাবে গ্রহণীয় হয়ে উঠেনি যে একজন পুরুষ যখন ১৬ বছরের নিচে একজন ছেলে শিশুকে তার ইচ্ছায় বা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার পায়ু প্রবেশ করে, তখন সেই পুরুষটিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর অধীনে অভিযুক্ত করা যায়। কোথাও এটা পরিষ্কার করে বলে দেয়া হয়নি যে এই পরিস্থিতির পায়ুসঙ্গমগুলো হচ্ছে “ধর্ষণ”-এর শামিল।

উপরন্তু, একজন পুরুষ যদি আরেকজন পুরুষের সাথে জোর পূর্বক পায়ুসঙ্গমে লিপ্ত হয়, তাহলে বর্তমানে সেই ধর্ষণের শিকার পুরুষটির কোনও আইনি আশ্রয় নেই। সম্প্রতি বিবিসি বাংলায় একটি সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী জনাব আনিসুল হক উল্লেখ করেছেন যে অন্য পুরুষ দ্বারা পায়ুসঙ্গমে সন্মতি দেয়নি (অর্থাৎ ধর্ষণের শিকার) এমন একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বাংলাদেশের দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারার মাধ্যমে আইনি প্রতিকার পেতে পারে, যেই ধারাটি প্রকৃতি বিরুদ্ধ যে কোনও যৌনাচারকে অপরাধিকরণ করে এবং যেখানে মূলত পায়ুসঙ্গমকেই বোঝানো হয়েছে। এটা মন্ত্রীর উপলব্ধি হয়নি যে এই ধারার অধীনে জোর পূর্বক পায়ুসঙ্গমকারী আর সেটার শিকার উভয়ই দণ্ডিত হবে, এবং সেই কারণে আরেকজন পুরুষ দ্বারা এরকম জোর পূর্বক যৌনাচারের একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ শিকার কখনোই বিচার চাইতে আসে না।

৩৭৭ ধারা একই সাথে অমানবিক এবং অনৈতিক। এটি বিলেতি সাম্রাজ্যবাদের একটি অবশিষ্ট্যাংশ এবং সভ্য জগতে এটা এখন ব্যাপকভাবে স্বীকৃত যে প্রাপ্তবয়স্ক সমলিঙ্গের মানুষদের মাঝে সন্মতিসূচক যৌনাচারকে কখনোই দণ্ডিত করা যাবে না। এই ধারার বিরুদ্ধে আবেদন করাটা আরেক দিনের সংগ্রাম।

এই রিট আবেদনটি প্রার্থনা করেছে “ধর্ষণ” শব্দটির সংজ্ঞাকে প্রসারিত করে সেখানে যৌনাচারের প্রকার ও তাতে অংশগ্রহণকারীদের লিঙ্গ (পুরুষ বা নারী) উপেক্ষা করে সকল রকম জোর পূর্বক যৌনাচারকে অন্তর্ভুক্ত করতে। আবেদনটিতে সংশ্লিষ্ট সকল প্রকার যৌনাচারের বিস্তারিত দেয়া হয়েছে। এর ফলে সকল মানুষকে (জোর পূর্বক যৌনাচারকারী এবং তার শিকার উভয়কে যথারীতি আইনের শাসনে এবং আইনের আশ্রয়ে) আনা যাবে এবং বাংলাদেশের সংবিধানে নিশ্চিত করা আইনের চোখে সকলের সাম্যতা বজায় রাখা যাবে।

এই আবেদনটিকে এই পর্যায়ে আনার জন্য ডাঃ সৌমেন ভৌমিক তার ব্যক্তিগত অর্থের একটি বিরাট অংশ ব্যয় করেছেন। আসন্ন শুনানির জন্য আরও অর্থের প্রয়োজন হবে। ডাঃ ভৌমিকের জন্য এই প্রচেষ্টাটি একা অর্থায়ণ করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। অথচ এই আবেদনটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যেহেতু যে কোনও মানুষ দ্বারা (অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরুষ) যৌন আক্রমণের শিকার কোনও পুরুষ বা রূপান্তরকামীর জন্য আইনি প্রতিকারের কোনও ব্যবস্থাই নেই।

আমি সবিনয়ে আপনাদেরকে অনুরোধ করছি এই লক্ষ্যটির জন্য এই লেখাটির নিচের দিকে দেয়া বিকাশ অথবা ব্যাংক হিসাবের তথ্য ব্যবহার করে যে কোনও পরিমাণ অর্থ অনুদান দিতে। কোনও প্রকার বিলম্ব ছাড়াই ক) শুনানিগুলো সম্পন্ন করতে এবং খ) ডাঃ ভৌমিককে কিছুটা প্রতিদান দিতে আমরা আরও ৫০০,০০০ টাকা সংগ্রহ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। আমরা আপনাদের ঔদার্যের জন্য অত্যন্ত কৃতজ্ঞ থাকবো। আপনারা দেশটির জন্য নিদারুণভাবে প্রয়োজনীয় একটি তাৎপর্যপূর্ণ আইনি ও সামাজিক পরিবর্তনের অংশ হয়ে থাকবেন।

আমরা বাংলাদেশের ভেতর থেকে অনুদান সংগ্রহ করে লক্ষ্য মাত্রার সিংগভাগে পৌছাতে চাচ্ছি যদিও প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বিদেশি বন্ধুরাও অনুদান দিতে পারবেন। বাংলাদেশের ভেতর অনুদানকারীরা ডাঃ ভৌমিকের বিকাশ অথবা ব্যাংক হিসাবে সহজেই অর্থ স্থানান্তর করতে পারবেন। বাংলাদেশের বাইরে বাছাইকৃত দেশ থেকে অনুদানকারীরা সুপরিচিত আন্তর্জাতিক অর্থ স্থানান্তরের অ্যাপগুলো (যেমন ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন অথবা ট্রান্সফারওয়াইজের মোবাইল বা ওয়েব সংস্করণ) ব্যবহার করে বিকাশ মোবাইল ওয়ালেটে অথবা বাংলাদেশি ব্যাংক হিসাবে সরাসরি টাকা পাঠাতে পারবেন। এই অ্যাপগুলোতে আপনারা আপনাদের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন।

আপনাদের সকলকে শুভকামনা জানাচ্ছি এবং আশা করছি যে এই যাত্রায় আমরা আপনাদের সঙ্গ পাবো।

*****************
Writ Petition 505 Of 2021 Against Section 375 Of Bangladesh’s Penal Code

*****************

বিশেষ হালনাগাদ (১): ১১ এপ্রিল ২০২২

এই রিটে ডাঃ সৌমেন ভৌমিক প্রাথমিকভাবে জয়ী হয়েছেন। গত রোববার (৯ এপ্রিল ২০২২) দেশের উচ্চ আদালত রিটের পক্ষে একটি কারণ দর্শানোর আদেশ (রুল নিসি) জারি করে। বাংলাদেশ সরকারকে এক মাসের মধ্যে এই আদেশ মেনে নেয়ার সিদ্ধান্ত জানাতে হবে অথবা এই আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করতে হবে। একমাত্র ঘাউরামি ছাড়া এই আদেশের বিরুদ্ধে সরকার কেন আপীল করবে আমি তার কোনো যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।

এর পরবর্তীতে কী হবে, যার মধ্যে শুনানি অন্তর্ভুক্ত, আমরা অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের দন্ডবিধিতে ৩৭৫ ধারার একটি সংশোধিত এবং বর্ধিত সংস্করণ দেখতে পাবো যেটা বাংলাদেশের আইন ও বিচারের ক্ষেত্রে একটা বড় রকমের পরিবর্তন আনবে। বাংলাদেশে ধর্ষণের এই বর্ধিত সংজ্ঞা বড় রকমের একটা সামাজিক পরিবর্তনও আনবে। উদাহরণ, ধর্ষণের শিকার পুরুষরা একটা যথাযথ ধারার আদলে আইনের আশ্রয় নিতে পারবে, বর্তমানে যেটার সুযোগ নেই।

একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি ও সামাজিক পরিবর্তনের পথ দেখাতে পারার পাশাপাশি ডাঃ সৌমেন ভৌমিক আরেকটা জিনিষ দেখিয়ে দিলেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাংলাদেশের দন্ডবিধির যে কোনও ধারার বিরুদ্ধে রিট আনা যায় এবং সেখানে যৌক্তিকতা এবং আইনি দৃঢ়তা থাকলে আদালতের কাছ থেকে সেই রিটের পক্ষে আদেশ পাওয়া যায়। এর জন্য তার কাছে বাংলাদেশের সকলের কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ। এত দিন কেবল দেশের ভেতর আইনি বা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মাধ্যমে এই রিটগুলো আনা হয়েছে। একজন বাংলাদেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই প্রথম। এই দৃষ্টান্তটা আগামী দিনগুলোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সহায়তা করুন

ডাঃ ভৌমিক তার ব্যক্তিগত অর্থ থেকে একটা বিরাট অংশ ব্যয় করে আমাদেরকে এই প্রাথমিক বিজয়টা এনে দিয়েছেন। অর্থ ব্যয় ছাড়াও তিনি এটার পেছনে তার ব্যক্তিগত জীবনটা উৎসর্গ করে দিয়েছেন। দেড় বছর আগে রিটটি দাখিল করার সময়ে আপনাদের অনেকের কাছে এসেছিলাম অনুগ্রহ করে ডাঃ ভৌমিককে কিছু অনুদান দিয়ে সহায়তা করতে কিন্তু কোথাও কোনও সারা পাইনি। আজ আপনাদের কাছে আবার এসেছি। রুল নিসির লিখিত অনুলিপি পাওয়ার জন্য আইনজীবীদের কাছে ৫০,০০০ টাকা জমা দিতে হবে। আপনারা যে যতটুকুই পারেন, যদি বিকাশ বা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে তাকে কিছু অনুদান পাঠান, তাহলে তিনি সবার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবেন। সেগুলোর তথ্য দেয়া হলো। অনেক ধন্যবাদ।

বিকাশ তথ্য / bKash Information:
Soumen Bhowmic
Wallet Number: 01681765151
From Outside Bangladesh:
+8801681765151

ব্যাংক হিসাব তথ্য /
Bank Account Information:

Soumen Bhowmic
BRAC Bank
Joydebpur Branch
Gazipur
Bangladesh
Account: 2001102602362001

ইমেল / Email:
soumenbhowmic@gmail.com

বিশেষ হালনাগাদ (২): ২৭ এপ্রিল ২০২২

ডঃ সৌমেন ভৌমিক তার নিজের অর্থায়নে আদেশের লিখিত অনুলিপি এনেছেন যা নিচে দেয়া হলো। এই লিখিত অনুলিপির তারিখ অর্থাৎ ২৬ এপ্রিল ২০২২ থেকে ঠিক ৪ (চার) সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারকে তার উত্তর জানাতে হবে।

*********************

Leave a comment