Slowly but surely, Bangladesh seems to be marching towards better days for the LGBTQIA population – not necessarily gays and lesbians among them but the transgender, non-binary and intersex people, i.e. for whom gender identity becomes an issue at some point in their lives for it contradicting the physical gender assigned at birth. This is known in medical terms as gender dysphoria.
The government had previously recognised such people (incorrectly in my opinion) as belonging to a third gender. From now on, all paperwork relating to schooling will have the option to fill out one’s gender as male, female or third gender. It is conceivable that all official papers in the country will have this option in the future (some already do). The government has also taken the decision to incorporate the issue of third gender people in the school curriculum to better educate youngsters about the presence and value of such people among them. When the time comes to declare a new gender identity compared to the physical gender assigned at birth, it will, in the near future, be possible to have that changed in all official documents.
This may seem surprising for a Muslim majority country. But it has been known through generations that such people have existed for ever. How else do you explain the presence of the artificial social construct in South Asia called the Hijra community where many LGBTQIA people have taken refuge over time immemorial to find shelter after being shunned by family and mainstream society? The Islamic faith also seems less harsh on those classified (incorrectly) as belonging to the third gender (as opposed to those who are gay or lesbian), and Muslims generally accept that God made these people as they are for better or for worse. The generosity of this thought is not afforded to gays and lesbians, it must be added.
So one has to appreciate the little victories. I am told that the current Prime Minister of Bangladesh Sheikh Hasina is personally LGBT friendly and it is no doubt that it is her American educated adult children who have encouraged her to take a bold decision regarding the country’s transgender, non-binary and intersex people. Credit also goes to the local organisations that have worked with them over the years and have highlighted their plight. Some eminent transgender persons in Bangladesh who have tirelessly gone about setting personal examples to others must be highly applauded. The next step must be government and private efforts to support in all manner the issue of gender reassignment when required.
তালেবান এবং আল-কায়দা যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি, বা যুক্তরাষ্ট্র মুসলমান দুনিয়ায় চরমপন্থী মুসলমান গোষ্ঠীগুলোকে উস্কানি দিয়ে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করেছে, এগুলো চিরচারিত অলস ব্যাখ্যা যা একই সঙ্গে সুবিধাবাদী। এই ব্যাখ্যাগুলোর মাধ্যমে মুমিনরা সহজেই নিজেদের দোষ বা কমতির দায় আমেরিকার উপর চাঁপিয়ে দিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচে। আর বামরাও “পুঁজিবাদী” যুক্তরাষ্ট্রকে হেয় করার আরেকটা হাতিয়ার খুঁজে পায়। অথচ বাস্তবতা আরও অনেক জটিল যা অনুধাবন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রাক্তন সোভিয়েট ইউনিয়নের মধ্যকার স্নায়ুযুদ্ধ সম্বন্ধে জানতে হবে এবং ১৯৭৯ সালে সেই সোভিয়েট ইউনিয়ন একটি আফগান সাম্যবাদী সরকারকে সহায়তা করার নামে যেভাবে আফগানিস্তানকে ১০ বছরের জন্য সামরিকভাবে দখল করে ফেললো সেটার সম্বন্ধে অবহিত হতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশ তখন পশ্চিম এশিয়ায় সাম্যবাদ ঠ্যাকাতে সাম্যবাদ বিরোধী ইসলামপন্থী আফগান মুজাহিদীনদেরকে সহায়তা করেছিল।
মুজাহিদীনদের অবির্ভাব হয়েছিল কয়েকটি গেরিলা গোত্রের সমন্বয় হিসেবে তাদের দেশে আগ্রাসনবাদী সোভিয়েটদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এবং স্থানীয় সাম্যবাদী সরকারকে উৎখাত করার জন্য। কিন্তু তালেবানের জন্ম তার কিছু পর আফগানিস্তানের বিভিন্ন দেওবন্দী মাদ্রাসায়। ১০ বছর পর মুজাহিদীনদের হাতে হেরে যাওয়ার পর আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েট সেনা প্রত্যাহারের পর মুজাহিদীনদের মধ্যেই ক্ষমতার জন্য লড়াই শুরু হয়ে যায়। সেই সময়ে মুজাহিদীনদের বিপক্ষ শক্তি হিসেবে তালেবানদের প্রকৃত উত্থান হয়। তারা আফগানিস্তান দখল করতে সক্ষম হয় এবং তাতে তারা পাকিস্তানের গোয়েন্দা বিভাগ আইএসআই-এর সহায়তা পায়।
আল-কায়দা অন্য দিকে ছিল সোভিয়েটদের বিরুদ্ধে লড়াই করা মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক একটি ইসলামী গোষ্ঠী যেটা আফগান মুজাহিদীনদেরকে সহায়তা করেছিল৷ মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগ সিআইএর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে আল-কায়দা যখন মুজাহিদীনদের সমর্থন করছিল তখন তারা সিআইএর সমর্থন পেয়েছিল। এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব নয় যেহেতু গোয়েন্দাদের কার্যকলাপ প্রকাশ্যে হয় না। তবে পাকিস্তান যে তালেবানদের সহায়তা করেছিল সেটা হয়েছিল প্রকাশ্যে। সোভিয়েট সেনাদের বিদায়ের পর আফগানিস্তান প্রথমে মুজাহিদীন ও তারপর তালেবানদের অধীনে চলে আসার পর আরব নাগরিক ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বে আল-কায়দা গোষ্ঠীটি আফগানিস্তানে ঘাটি খুলে বসে।
সাম্যবাদীদের বিরুদ্ধে এত দিন সংগ্রাম করে বিন লাদেন ১৯৯৬ সালে উলটা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই চলে যায়। ১৯৯১ সালে আমেরিকা কুয়েতকে ইরাকের আগ্রাসন থেকে মুক্ত করার পর মক্কা-মদিনার দেশে মার্কিন সেনার উপস্থিতি বিন লাদেন সহ্য করতে পারেনি এবং ইহুদি-খ্রিস্ট সম্প্রদায়ের উপর লাদেন জিহাদ ঘোষণা করে। ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের উপর আল-কায়দার ভয়াবহ আত্মঘাতি বিমান হামলা সেই জিহাদ ডাকেরই পরবর্তি অধ্যায়। বাকিটা ইতিহাস।
সিআইএর বিরুদ্ধে উপরে উল্লেখিত অভিযোগটি সত্য হলেও এর অর্থ কি এই দাঁড়ায় যে আমেরিকাই তালেবান ও আল-কায়দা তৈরি করেছে? এরকম সস্তা ব্যাখ্যা বংশের পর বংশ সবাই গিলেছে যা উপমহাদেশীয় মুসলমানদের মধ্যে একটি “বলির পাঠা” মানসিকতার জন্ম দিয়েছে যা উলটো জঙ্গিবাদ ছড়িয়েছে। সকলের উচিৎ নিজ ক্ষমতা অনুযায়ী বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা। অন্তত জানার ইচ্ছাটা থাকতে হবে। আমি উইকিপিডিয়া ঘেটে এই সারমর্মটা লিখলাম এবং এর মধ্যে ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে যা আমি আমার পাঠকদেরকে তুলে ধরার জন্য আমন্ত্রন জানাচ্ছি। আমি তখন ব্যাপারটা আরো ঘেটে দেখবো। কিন্তু সবার প্রতি অনুরোধ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ধ্যান-ধারনা, জল্পনা-কল্পনা, ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ইত্যাদি থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করুন। এখন আর স্নায়ুযুদ্ধের মৌসুম নেই।
বিঃ দ্রঃ একটু হালনাগাদ, মার্চ ২০২২। ইউক্রেনকে ঘিরে পশ্চিমা বিশ্ব আর রাশিয়ার মধ্যে আবার নতুন করে স্নায়ু যুদ্ধ শুরু হয়েছে।
*********************
এবার আসছি ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর প্রসঙ্গে। ২০০৪ সালে ইরাকে আল-কায়দার অবশিষ্ট একটি দল “আবু মুসাব আল জারকাউই” নামের একজনের নেতৃত্বে ইসলামিক স্টেট, আইসিস, আইসিল, আইএস বা দায়েশ নামে উদিত হয়। ২০০৭ সালে ইরাকে মার্কিন সেনার উপস্থিতি বৃদ্ধি করার পর দলটি কয়েক বছরের জন্য লুকিয়ে যায়। তবে ২০১১ সালে গোষ্ঠিটি আবার নতুন করে তার রূপ প্রকাশ করে। তারা ইরাক এবং সিরিয়ায় তখনকার অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন আক্রমণাত্বক অভিযানের মাধ্যমে তাদের দল ভারি করতে শুরু করে। ইরাকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য ২০০৩ সালে শুরু করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ও দখল অনেকাংশে দায়ী। আর সিরিয়ার অস্থিতিশীল পরিবেশ ছিল মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে “আরব স্প্রিং” নামের গনজাগরণের ধারাবাহিকতা যেখানে সিরিয়ার বহু নাগরিক স্বৈরাচারী নেতা বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছিল। ২০১৪ সালে ইরাকের মসুল আর তিক্রিত অঞ্চল দখল করে নিয়ে ইসলামিক স্টেটের পরের নেতা “আবু বাকর আল বাগদাদি” সিরিয়ার আলেপো থেকে শুরু করে ইরাকের দীয়ালা পর্যন্ত একটি ইসলামী খেলাফত তৈরির ঘোষণা দেয়।
তারপরেই বিশ্ববাসী তাদের বিভৎস রূপ দেখতে পায়। তাদের দখল করে নেয়া স্থানগুলোতে কীভাবে অজস্র স্থানীয় পুরুষদেরকে গরুর মতো জবাই করা হয় এবং নারীদেরকে বন্দী এবং/অথবা ধর্ষণ করা হয়, তা ছিল অবিশ্বাস্য। তলোয়ার দিয়ে বিদেশি সাংবাদিকদের গলা কর্তনের ভিডিও আইএসের লোক আন্তর্জালে ছড়িয়ে দেয়। যারাই খেলাফতের নামে মাত্র বিরোধিতা করেছে, তাদেরই বরণ করে নিতে হয়েছে তলোয়ারের ধারে বা বন্দুকের গুলিতে মৃত্যু। সমকামীদেরকে উঁচু দালান বা পাহাড় থেকে নিক্ষেপ করার ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। এই খেলাফতের দানবরা আরও যেটা করেছে তা হলো অজস্র স্থানীয় ইয়াজিদি নারীদের দাসী হিসেবে আটক করে ফেলে তাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ধর্ষণ এবং/অথবা খুন।
দানবরা এতটাই নেট বিশেষজ্ঞ ছিল যে তারা সুকৌশলে প্রচারণা করে সারা বিশ্বের বহু তরুণ ও তরুণীদেরকে এই খেলাফত প্রতিষ্ঠার ডাকে সারা দিতে সফল হয়। তাদেরকে একটা রোমাঞ্চকর চিত্র তুলে দিয়ে মুসলমান হওয়ার দায়িত্ব পালনের ডাক দেয়া হয়। এর প্রত্যুত্তরে প্রাথমিকভাবে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা থেকে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি বংশদ্ভুত বিলেতি, মার্কিন ও ক্যানাডিয়ান তরুণ নাগরিকরা পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও প্রশাসনের নাকের ডগায় তুরস্ক হয়ে দায়েশে গিয়ে হাজির হয়। পরে আরও অনেক জায়গা থেকে মানুষ এসে ইসলামিক স্টেটের জনসংখ্যা বাড়াতে থাকে। আর সেই সাথে চলতে থাকে অভিযান, খুন আর ধর্ষণের মাধ্যমে খেলাফতের আয়তন বাড়ানো। বাইরে থেকে সেখানে আগত তরুণীদেরকে আইএস তরুণদের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়। তবে পাশাপাশি ইয়াজিদি দাসীদের ধর্ষণ চলতে থাকে।
২০১৪ সালেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে বিশাল অভিযান শুরু করা হয়। এতে ইরাকের অঞ্চলে জঙ্গি সংঘটনটি ব্যাপক এলাকা হারিয়ে ফেলে। কিন্তু সিরিয়ার আলেপো এবং রাক্কায় তাদের ঘাটি আরও শক্ত হয়। ২০১৫ সালে তারা অন্ততপক্ষে আরও আটটি দেশে তাদের বিভিন্ন শাখা স্থাপন করতে সক্ষম হয়। সেগুলোর মাধ্যমে ইসলামিক স্টেট তার খেলাফতের সীমানার বাইরেও অনেক আক্রমণ শুরু করে। একই বছরের অক্টোবর মাসে মিশরের আইসিস শাখা রুশের একটি বিমানকে বোমা মেরে সকল ২২৪ জন যাত্রিকে নিহত করে। নম্ভেম্বর মাসে ফ্রান্সের আইসিস শাখা প্যারিসে সন্মিলিত হামলা করে ১৩০ জনকে হত্যা করে এবং ৩০০ জনকে আহত করে। ২০১৬ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে আইসিসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা এক ব্যক্তি ফ্লোরিডায় একটি সমকামীদের নাইটক্লাবে গুলি চালিয়ে অন্তত চার ডজন মানুষকে খুন করে।
তবে দায়েশের বিরুদ্ধে ইরাকের নেতৃত্বে আভিযান চলতে থাকে এবং ২০১৭ সালের ডিসেম্বর নাগাদ জঙ্গি সংঘটনটি ইরাক ও সিরিয়া মিলে তার ৯৫ শতাংশ এলাকা হারিয়ে ফেলে। ইরাকে আইএসের বিরুদ্ধে জয় ঘোষণা করা হলেও তারা সারা দুনিয়াতে কিছু মানুষদের অনুপ্রাণিত করে বিভিন্ন আক্রমণ চালিয়ে যেতে সক্ষম হতে থাকে, উদাহরণ স্বরূপ নিউইয়র্ক শহরে। আইসিসকে নির্মূল করে দেয়ার জন্য ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে “সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস” নামের একটি সামরিক বাহিনী সিরিয়ায় আইএসের অবশিষ্ট ঘাটিগুলোতে অভিযান চালায়। হাজিন নামের একটি শহর জঙ্গিদের কাছ থেকে নিয়ে নেয়ার পর তাদের দখলে বাকি থাকে ইরাকের সীমান্তে ইউফ্রেটিস নদীর তীর ঘেঁষে কিছু গ্রাম।
২০১৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডনাল্ড ট্রাম্প আইসিসের বিরুদ্ধে জয় ঘোষণা করলেও পরের বছর সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস সিরিয়ার বাঘুজ নামের একটি স্থানে আইএসের শেষ ঘাটিটিতে আক্রমণ চালায়। সেই বছরের ২৩ মার্চে সামরিক বাহিনীটি বাঘুজকে ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হয় এবং তারপর খেলাফতের আর কোনো অবশিষ্ট স্থান বলে কিছু বাকি থাকেনি। সকল জঙ্গি ও তাদের পরিবারগুলো গণহারে আত্মসমর্পণ করে। ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবরে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে একটি মার্কিন অভিযানে ইসলামিক স্টেটের নেতা আবু বাকর আল বাগদাদিকে হত্যা করে ইতিহাসের এই বিভৎস অধ্যায়ের আপাত ইতি টেনে আনা হয়।
তাহলে এবার আসি বাংলাদেশের প্রসঙ্গে। দেশটির অগারাম গণমাধ্যম মধ্যপ্রাচ্যে ঘটে যাওয়া এত বড় একটা ক্যান্সারের ফিরিস্তি জনগনের কাছে তুলে ধরতে প্রয়োজন বোধ করেনি। দেশের মানুষ এই বিষয়ে কিছুই জানতে পারেনি। ছিটেফোঁটা যা জেনেছে তা সম্ভব হয়েছে মুমিনদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে। প্রথমে কারো কারো মুখে শুনেছি আল-কায়দার মতো ইসলামিক স্টেটকেও আমেরিকা তৈরি করে দিয়েছে মুসলমানদের মানহানি করা জন্য। আমি আরও আশ্চর্য হয়েছি এটা দেখে যে আইএস মানে যে “ইসলামিক স্টেট” সেটাও মানুষের অগোচরে আসেনি। এই সুযোগে অনেকে বলতে শুরু করেছিল আইএস মানে “ইসরায়েলি স্টেট”। ইহুদিরাই এই জঙ্গি সংঘটন তৈরি করে দিয়েছে ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর জন্য।
তার উপর মুসলমানরা কখনও এই ধরণের কাজ করতে পারে না – এই জাতীয় প্রলাপ বাংলাদেশের জনগনকে আইএসের ব্যাপারে পাত্তা না দিতে সহায়তা করেছে। ইসলাম সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করে না ইত্যাদি বক্তৃতা বহু পুরানো। তবে কোরআন ও হাদিসেই যে খেলাফত সৃষ্টি ও তার (বর্বর) মাধ্যমের সকল উৎপত্তি খুঁজে পাওয়া যায়, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ সেই বাস্তবতার সাথে এখনো পরিচিত হয়নি।
বাংলাদেশের পুঁথিগত মুখস্ত বিদ্যা এবং বিভিন্ন পেশা দেশের মানুষদেরকে কোন ধরণের জ্ঞান দান করেছে তা আমার বোধগম্য নয়। কয়েক দিন পরপরই শুনতে পাই গৃহকর্মীকে নির্যাতন করার জন্য আইনজীবী বা ডাক্তার গ্রেফতার। অভিযুক্তদের পেশা অবশ্য এখানে মুখ্য বিষয় নয়। তবুও শিক্ষার আদলে প্রতিষ্ঠিত পেশাজীবীরাও যখন এই সব কাজে লিপ্ত হয়, তখন প্রশ্ন জাগতেই পারে যে এদের শিক্ষার আলো কতটুকু ছিল।
ঠিক এরকম আরো ঘটনার খবর সামাজিক মাধ্যমের যুগে বেড়িয়ে আসছে যার একই রকম পুরানো ঘটনাগুলো বিগত দশকের পর দশক ছিল ধামাচাপা দেয়া। নিজের চোখে দেখেননি এগুলো? নিজেও এতে কখনো অংশগ্রহণ করেননি? এই অবস্থাটি যে বাংলাদেশের সমাজের আরেকটি ক্যান্সার সেটা উপলব্ধি করার ক্ষমতা কি আপনাদের আছে? এগুলো চিরতরে বন্ধ করার দায়িত্ব যে আমাদের সবার সেই হুঁশ কি আপনাদের নেই? প্রতিবেশি হয়ে আমাদের সকলের দায়িত্ব কোথাও থেকে গৃহকর্মীদের আর্তনাদের আওয়াজ আসতে শুরু করলে ৯১১ নম্বরে যোগাযোগ করা, নিজের চোখে গৃহকর্মীদের গায়ে খতের দাগ দেখলে মোবাইলের মাধ্যমে তা কতৃপক্ষের নজরে আনা। এবং এগুলো করতে হবে অত্যাচারকারীরা আপনার আপন পরিবারের মানুষজন হলেও।
সেই ছোট বেলা থেকেই দেখে এসেছি আমার আগের প্রজন্ম এবং তারও আগের প্রজন্মের মানুষরা কীভাবে অসহায় অবস্থায় কৃতদাস হিসেবে কাজ নেয়া গৃহকর্মীদেরকে (শিশু মেয়ে ও ছেলে থেকে শুরু করে বয়স্ক মহিলা পর্যন্ত) পান থেকে চুন খসার মত সামান্য অপরাধেই নির্মমভাবে প্রহার করেছে। সবার মধ্যেই ছিল এদের অসহায়ত্বের সুযোগ নেয়ার প্রতিযোগিতা। এদেরকে মানুষ হিসেবে গণ্য করার ক্ষমতা পরিবারের কারোরই ছিল না। অভিভাবকদের উদাহরণ দেখে দেখে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত বাচ্চারা অনেকেই এই সব গৃহকর্মীদের সাথে ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ রেখে কথা বলতে শিখতো না।
এই কাজের মানুষদের চরম দারিদ্রের কারণে এদেরকে বিনা বেতনেই রাখা যেত। মাথার উপর একটা ছাদ, থালায় একটু খাবার আর শোয়ার জন্য মেঝের উপর একটা মাদুর দিলেই এদেরকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাওয়া যেত। এরাও তাদের নিয়তি মেনে নিয়ে ছাদ, থালা আর মাদুরের সাথে বিলি করে দেয়া সকল মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার মেনে নিত।
আবার এটাও দেখতাম যে কোনো পরিবারে একটা কাজের মানুষ বেশি দিন থাকতে পারতো না। এই সব অত্যাচার সহ্য করার ক্ষমতা শেষ হয়ে যাওয়ার পর জান বাঁচানোর জন্যই তারা চলে যেত। ওমা! তখন দেখি সেই সব বাড়িতে খনিকের জন্য রান্নাঘরে ভাত বসতো না, বাড়িঘর পরিষ্কার হতো না, কাপড়-চোপড় ধোয়া হতো না ইত্যাদি। অর্থাৎ জালেমরা যাদের সাথে দিনরাত অবাঞ্ছিত কুকুরের মতো ব্যবহার করতো, সেই কুকুরদেরই উপর তারা আবার পরগাছা হয়ে বাস করতো। দাসদের সেবা ছাড়া এনারা যেন নিশ্বাসও নিতে পারতো না।
আমি মনে প্রাণে কামনা করছি যে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে সাথে এমন একটা সময় আসবে যখন গৃহকর্ম করতে ইচ্ছুক এরকম একটা মানুষও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সবাই পোশাক শিল্প বা অন্য কোথাও আত্মমর্যাদা নিয়ে কাজ করে বেঁচে থাকতে পারবে। আমাদের মাঝে সকল পরগাছারাও দাসদের উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজের ঘর গোছানো ও পরিষ্কার করা, কাপড় ধোয়া, এমন কি নিজের রান্নার কাজটাও শিখে নেবে৷ এবং সেখানে নারী ও পুরুষ বলতে পৃথক কিছু থাকবে না। সবাই রোজকার করবে আবার সমান ভাগে সংসারের কাজও সেরে নেবে। এই সমাজ না আসা পর্যন্ত “উন্নত দেশ” কথাটা বাংলাদেশের বেলায় খাটানো যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের রাজনীতিবীদ এবং আমজনতাকে এই বিষয়টা নিয়ে এক সময়ে নতুন করে ভাবতে হবেই। তবে সেই সময়টা এখন এসেছে কি না সেটা নিয়ে তর্ক বিতর্ক থাকতেই পারে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি অঢেল সংহতির মধ্যে দোষের কিছু নেই। কিন্তু ৭১ সালে বাংলাদেশের প্রতি ইসরায়েলের ইতিবাচক ভূমিকা আমরা কি উপেক্ষা করতে পারি? আবার সেটারই অপর পৃষ্ঠে আমরা দেখি যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি আরব দুনিয়ার কোনো সমর্থন ছিল না। আমরা তাহলে কাদের অনুসরণ করে চলি? আমরা কাদের খুশি করার চেষ্টায় লিপ্ত? ইসরায়েলের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে ইসরায়েলকে চাপ দেয়ার ক্ষমতা আমরা কি কল্পনা করতে পারি না? সবচেয়ে প্রথমে আমাদের মধ্য থেকে যেটা দূর করতে হবে সেটা হচ্ছে ইহুদি বিদ্বেষ। মুসলমান বিদ্বেষের চেয়ে সেটা কি ভিন্ন?
ইসরায়েলে নেতানিয়াহুর সম্ভাব্য বিদায় এবং এর সাথে বিরোধী দলগুলোর সমন্বয়ে একটি নতুন জোট সরকারের আগমন আমাদেরকে কিছুটা স্বস্তির জায়গা করে দেবে। তবে নতুন সরকার প্রথম থেকে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিয়েই ব্যস্ত থাকবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছে৷ ফিলিস্তিনিদের নিয়ে দুই রাষ্ট্র গঠনে ইসরায়েলের আপাতত কোনো উদ্যোগ চোখে পড়বে না। তবে দুই-তিন বছর পর মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন এবং ইসরায়েলের নতুন প্রধানমন্ত্রী এই দিকে নজর দিতে পারেন। এবং সেই নাটক অনেকবার দেখা হয়ে গেছে৷ স্বপ্নেও কেউ সেটার সাফল্য কল্পনা করতে পারছে না। তবুও তিন পক্ষকেই আবারও প্রচেষ্টায় লিপ্ত হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
তিন পক্ষ বলতে আমি বুঝাচ্ছি ১) ইসরায়েলি সরকার ২) মার্কিন সরকার এবং ৩) ফিলিস্তিনিদের মাঝে পশ্চিম তীরে অবস্থিত ফাতাহ গোষ্ঠি, আবু মাজেন যার নেতা। ফিলিস্তিনিদের মাঝে গাজা উপত্যকায় অবস্থিত হামাস গোষ্ঠিকে তার আগেই সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় করে ফেলতে হবে। সেটা কীভাবে করা যাবে তার কোনো কৌশল আমার জানা নেই। তবে যত দিন ফিলিস্তিনিদের মাঝে হামাস আছে ততদিন ফিলিস্তিনিদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।
সেটার কারণ ১) বিগত শান্তি প্রক্রিয়াগুলোর শেষাংশের সময়ে হামাসের সকল আত্মঘাতী কার্যকলাপ (উদাহরণঃ ইসরায়েলি স্কুল বাচ্চাদেরকে আত্মঘাতী বোমা হামলার মাধ্যমে হত্যা করা); ২) হামাস যত দিন খানিকটা সময় বিরতি দিয়ে কিছু দিন পর পর ইসরায়েলের দিকে রকেট নিক্ষেপ করে নতুন করে দাঙ্গা শুরু করবে, তত দিন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পাল্টা আক্রমণ করে গাজায় বোমা মেরে হামাসের লোক এবং সাথে অনেক নিরীহ ফিলিস্তিনি মানুষ হত্যা করবেই (এবং সকল শান্তি আলোচনা থেকে বিরত থাকবে); ৩) ফাতাহের নেতৃত্বে ইসরায়েলের সাথে ভবিষ্যতের চূড়ান্ত ফিলিস্তিনি চুক্তি হামাস মেনে না নেয়ার সম্ভাবনা, এবং একই সাথে ইসরায়েলকে চিরতরে মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার হামাসের ব্যর্থ অঙ্গিকার ও প্রচেষ্টা।
রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে সেই কবে থেকেই বলে আসছি যে তারা মায়ানমারে আর ফেরত যাচ্ছে না। এর কারণ প্রথম থেকেই স্পষ্ট ছিল। সেই দেশের সেনা প্রধানরা এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা তাদের দেশে মুসলমান রোহিঙ্গাদের আর চায় না। ইতিহাসের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তারা রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে রাখাইন প্রদেশ খালি করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়। সেটা সাধন করার জন্য সেনারা রোহিঙ্গাদের উপর ৭১ সালের কায়দায় গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ইত্যাদি চালিয়ে সেই জনগোষ্ঠীকে জান বাঁচানোর জন্য পর্যায়ক্রমে নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে বাধ্য করে।
বাংলাদেশ সরকার এটা জেনেও দেশবাসীকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এসেছে যে রোহিঙ্গাদেরকে সাময়িকভাবে আশ্রয় দেয়া হয়েছে এবং মায়ানমার সরকারের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে উদ্বাস্তুদেরকে ধীরে ধীরে তাদের আগের জায়গায় ফেরত পাঠানো হবে। অথচ মায়ানমারের সেরকম কোনো আগ্রহ প্রথম থেকেই ছিল না। কারণ তাদের আসল উদ্দেশ্যই ছিল রোহিঙ্গাদেরকে মায়ানমার থেকে চিরকালের জন্য উচ্ছেদ করা বা নির্মূল করা। উল্লেখ করতে চাই যে নাফ নদীতে ডুবে মরতে যাওয়া রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়ার সিদ্ধান্তটি ছিল বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে একেবারেই সঠিক এবং মানবিক। এর চেয়ে ভিন্ন কিছু কল্পনাও করা যায় না।
চীন এবং রুশ দেশ দুটো মায়ানমারের ঘনিষ্ট হওয়ায় এবং দুইটা দেশই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী এবং প্রতিষেধ করতে সক্ষম সদস্য হওয়াতে জাতিসংঘ মারফত মায়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো আন্তর্জাতিক পথ খোলা নেই। বিদেশি ও দেশি গণমাধ্যম এই দিকটি ভালোভাবে তুলে ধরতে পারলেও বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ব্যাপারটি সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারেনি বা করতে চায়নি। সরকারের ভুল ব্যাখ্যাও সবাই মিলে গিলেছে। এখন আসল চিত্রটাই বের হয়ে আসছে। আশা করি এবার দেশের মানুষ ব্যাপারটি সঠিকভাবে বুঝতে পারবে।
তো এখন প্রশ্ন আসবেই যে এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান কী হওয়া উচিৎ। তাদেরকে ভাসানচরে নিরাপদে রাখাটা একটা ভালো কিন্তু সাময়িক উদ্যোগ। আবারও বলছি যে এরা কেউ কোথাও যাচ্ছে না কারণ যাওয়ার জায়গাটি আর নেই। তো এরা কি বংশের পর বংশ এই দ্বীপেই তাদের জীবন পার করে দেবে? সেটা কি কোনোদিন মানবতার মানদন্ডের কাছাকাছি পৌঁছতে পারবে?
কখনোই না। বাংলাদেশ সরকারের এক্ষুণি যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার সাথে কূটনৈতিক তৎপরতায় ব্যস্ত হয়ে পড়তে হবে রোহিঙ্গাদেরকে গ্রহণ করে নেয়ার জন্য তাদেরকে আহবান করার লক্ষ্য নিয়ে। সেই দেশ দুটি ঐতিহাসিকভাবেই পৃথিবীর সবখান থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ শরণার্থী গ্রহণ করে আসছে, তাদেরকে পুনর্বাসন করে আসছে এবং পর্যায়ক্রমে তাদেরকে নাগরিকত্ব দিয়ে তাদেরকে নতুন জীবন শুরু করার দিগন্ত উন্মোচন করে দিয়েছে।
সব রোহিঙ্গারা যে এই সুবিধার আওতায় আসতে পারবে সেই নিশ্চয়তা নেই। হয়তো কেউই সেটার আওতায় আসতে পারবে না। যারাই বাংলাদেশে থাকবে বা থেকে যাবে, তাদেরকে আমাদের মাঝেই পুনর্বাসন করে ফেলতে হবে। তাদেরকে আইনি প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে দিয়ে তাদেরকে তাদের পূর্ণাঙ্গ জীবন ভোগ করার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। বিনিময়ে তারাও পাবে তাদের নতুন দেশ বাংলাদেশকে অনেক কিছু দেয়ার রাস্তাটি।
এই উদ্যোগটি অবশ্যই সময় সাপেক্ষ এবং জটিল। সেটা নিতে গেলে দেশের অনেক সমস্যার সন্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তবে এখন যেই বোমা টিক টিক করছে তার চেয়ে সেই সমস্যাগুলো অপেক্ষাকৃত কম ভয়নক। উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখি, উন্নত দেশের আচার-ব্যবহার শিখতে ও মানসিকতা দেখাতে অনিহা প্রকাশ করলে কি চলবে?
ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের মাঝে দেশ, জমি ও বাসস্থান নিয়ে এই দুরূহ সমস্যা ও সংঘাতটির সমাধান সকলেরই জানা। এবং অনেকের বিশ্বাস না হলেও এটা সত্যি যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় (যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল সহ) এই সমাধানটির সম্বন্ধে একমত। কিন্তু এই সমাধানে পৌঁছানোর পথটি এখনো কেউ সঠিকভাবে খুঁজে পায়নি।
এর কারণ হচ্ছে ১) ইসরায়েলিরা এবং ফিলিস্তিনিরা দুটি দেশের মধ্যেকার চূড়ান্ত সীমানা নিয়ে একমত হতে পারেনি যার কারণ বহুবীদ; ২) ফিলিস্তিনিদের মাঝে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণে হামাস নামের যেই সংগঠনটি, সেটি ইসরায়েলের অস্তিত্বই এখনো মানতে পারেনি এবং ইসরায়েলকে রকেট মেরে ধ্বংস করে দেয়াই তাদের উদ্দেশ্য; ৩) ইসরায়েলিদের মধ্যেই কিছু চরমপন্থি ইহুদি আছে যারা ফিলিস্তিনিদেরকে কিছুতেই জায়গা-জমি ছেড়ে দিতে নারাজ।
কে কার জায়গা দখল করে আছে এই প্রশ্ন এখন অপ্রাসঙ্গিক৷ কে আদিকাল থেকে এই অঞ্চলে বাস করছে সেটাও অপ্রাসঙ্গিক (যদিও উত্তরটা জেনে আপনারা আশ্চর্য হতে পারেন)। ইতিহাসের কারণে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের আজকের এই করুণ দশা। ফিলিস্তিনিদের মুক্তি ও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বিশ্ববাসীর দাবী। ইসরায়েলিদের নিরাপত্তাও একটি ন্যায্য দাবী (সকল দেশের ক্ষেত্রেই তাই)।
এই আঙ্গিকেই এই সংঘাতটি পর্যালোচনা করতে হবে। ধর্মীয় অনুভূতি ও ইহুদি বিদ্বেষ দিয়ে এই পরিস্থিতিটি পর্যালোচনা করা যাবে না। আর বামপন্থীরা যখন এখানে পুঁজিবাদী আগ্রাসনের প্রসঙ্গ টেনে নিয়ে আসেন তখন তাদেরকে থামিয়ে দেবেন। মুসলমানদের উপর ইহুদি ও খ্রিস্ট ধর্মালবীদের আগ্রাসন হিসেবেও এই সংঘাতটি দেখা যাবে না যদিও ঠিক সেইভাবেই আমাদেরকে ছোট বেলায় সব শিখিয়ে দেয়া হয়েছে।
আমাদেরকে নিরপেক্ষভাবে দুই পক্ষকেই সমর্থন করতে হবে। কারণ দুই পক্ষেরই এখানে যৌক্তিক দাবী আছে। আর সেই কারণেই হামাস নামক গোষ্ঠীটি ইসরায়েলি নাগরিকদের উপর হামলা চালালে এবং তারপর ইসরায়েল প্রতিশোধ হিসেবে গাজার উপর বোমা মারলে দুই আক্রমণকেই সমানভাবে নিন্দা করতে হবে। একপেশে নিন্দা করা দিন শেষ।
ইসরায়েলিদের অধীনে ফিলিস্তিনিদের অমানবিক অবস্থার ইতি কীভাবে টেনে নিয়ে আসা যাবে, সকলের মনোযোগ শুধু সেই দিকেই দিতে হবে। সেটা ইসরায়েলের ধ্বংস নয়, বরং ইসরায়েলের পাশেই একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অস্থিত্ব, যার নাম হবে প্যালেস্টাইন।
বাংলাদেশের শ্রেণি বিভক্তি সকল সচেতন নাগরিকদেরকে পীড়া দেয়া উচিৎ। এই বিভক্তির বহিঃপ্রকাশ শুধু টাকার থলির মাধ্যমেই নয়, সাথে মান সন্মান, চলন বলন, বাচনভঙ্গি, দাম্ভিকতা, চেহারা, স্বাস্থ্য, শরীরের ওজন, পোশাক-আশাক, শিক্ষার মান, বাসস্থান, খাদ্যের রুচি, গানের রুচি, সিনেমা-থিয়েটারের রুচি, সব কিছুতেই। কে কোন কর্মের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে সেটার মাধ্যমে এই বিভক্তি সবচেয়ে বেশি নগ্নভাবে ফুঁটে ওঠে। কে কার সাথে মেলামেশা করে সেটাও একটা অলিখিত রীতির মাধ্যমে ফুঁটে ওঠে। উচ্চ অর্থনৈতিক তথা উচ্চ সামাজিক মানুষগণ উপরে উল্লেখিত সুবিধাগুলোর কারণে প্রথাগতভাবে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত জনগণদের চেয়ে নিজেদেরকে আলাদা ভেবে বাকিদেরকে কিছুটা হেয় প্রতিপন্ন করার ক্ষমতা লাভ করে। মধ্যবিত্তরা আবার ঠিক তেমনি নিম্নবিত্তদের। নিম্নবিত্তরা বহু আগেই মেনে নিয়েছে যে তাদের জীবনের মূল্য এবং মর্যাদা উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্তদের চেয়ে কম। মধ্যবিত্তরা নিজেদেরকে নিম্নবিত্তদের চেয়ে আরেকটু মূল্যবান মনে করে হাফ ছেড়ে বাঁচে আর উচ্চবিত্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখে। আর উচ্চবিত্তদের তো মাটিতেই পা পড়ে না (গাড়ি থাকতে পা কেন?)।
এই শ্রেণি বিভক্তির বিকাশের পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে যেগুলো মূল্যায়ন করার চেয়ে সেটা কমিয়ে আনার উপায় খোঁজাটাকে আমি বেশি অর্থবহ মনে করি। মানুষে মানুষে শতভাগ সাম্যতা একটি কল্পনার জগতে পাওয়া যেতে পারে। বাস্তব দুনিয়াতে সেটা সম্ভব নয়। বামপন্থী এমন কি সাম্যবাদ (কমিউনিজম) ভিত্তিক অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থাও সেটা কায়েম করতে সক্ষম হয়নি। আর হবেও না। এর কারণ হচ্ছে যে আমরা সব সময়েই ব্যক্তিগতভাবে এগিয়ে যেতে চাই। দিনের শেষে আমরা নিজেরটাই আগে দেখি। সমাজ, এমনকি পরিবারের ব্যাপারটাও তার পরে বিবেচিত হয়। আমাদের এই প্রবণতা অত্যন্ত প্রাচীণ এবং কার্ল মার্কসের বই হাজারবার পাঠ করেও সেটার পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।
তার মানেই কি যে আমরা আমাদের দেশ এবং পৃথিবীর সকল দেশে এরকম আর্থ-সামাজিক বিভেদ চিরকালের জন্য মেনে নেব? এর থেকে কোনো মাপের পরিত্রাণ পাওয়া কি অসম্ভব? বামপন্থী বা বিকল্প অর্থনীতির দিকে না ঝুঁকেও আমরা কি নতুন এক অভিমুখের পানে অগ্রসর হতে পারি না? আমি বাম আদর্শের ভক্ত – মানুষের মাঝে সাম্যতা নামক কাল্পনিক এই বস্তুটির বড় ভক্ত। কিন্তু আমি বাম অর্থনীতির ভক্ত নই। সেটার কৈফিয়ত দর্শানোর চেয়ে আমি কোন জিনিষটার ভক্ত সেটাই না হয় এখন বিশ্লেষণ করি। বাংলাদেশে একটা কল্যানমুখী রাষ্ট্র (welfare state) কায়েম করে আমরা আমাদের মাঝে বিদ্যমান ভেদাবেদটা অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পারি। কল্যানমুখী রাষ্ট্র আবার কী?
এই পরিবেশে ব্যক্তিমালিকানাধীন উদ্যোগেই দেশের ধন বা বিত্তের প্রসার ঘটবে কিন্তু প্রগতিশীল কর আদায়, অর্থাৎ বিত্তবানদের কাছ থেকে কর আদায় করে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে ধনবান এবং ধনহীনদের মধ্যে দূরত্বটা কমিয়ে আনা যাবে। কল্যাণমূলক কর্মসূচির উদাহরণ হচ্ছে বৃদ্ধদের জন্য ভাতা, বিধবাদের জন্য ভাতা, দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষদের জন্য বিশেষ কিছু সুবিধা, বয়স এবং যোগ্যতা বুঝে বেকারদের ভাতা ইত্যাদি। এরকম আরও উদাহরণ বাংলাদেশে পাওয়া যাবে। বর্তমান এবং বিগত সকল সরকারই এরকম কর্মসূচি কম বা বেশি চালিয়ে এসেছে বিভিন্ন স্তরের মানুষদের সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যকে সামনে রেখে।
তো এই রূপরেখা অবলম্বন করেই কি আমরা জনগণের মাঝেকার আর্থ-সামাজিক বিভেদটা যথেষ্টভাবে কমিয়ে আনতে সক্ষম হব? অবশ্যই না। সেটার জন্য দরকার কিছু বলিষ্ঠ রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পুণর্গঠন। আপনারা খেয়াল করবেন যে বাংলাদেশের বহুমুখী শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত আমাদের মাঝে বিভাজনের সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দুটি বাংলাদেশে ব্যবসায় রূপান্তরিত হয়েছে। যার অঢেল সম্পদ আছে সেই ভালো চিকিৎসা পেতে পারে। নিম্নবিত্তের মানুষ আহার করবে না কি ওষুধ কিনবে সেই চিন্তায় নিমগ্ন। ইংরেজি মাধ্যম, আরবি মাধ্যম আর বাংলা মাধ্যম বাংলাদেশে একটি বিশ্রী বিভাজনের সৃষ্টি করেছে যার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাবেন তরুণ-তরুণীদের বাচনভঙ্গি আর চলন বলনের মাঝেই। দেশকে তিন ভাগে ভাগ করে ফেলার এর চেয়ে ভালো রূপরেখা আর নেই।
একটি দুর্নীতিপরায়ণ দেশে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে একটি সর্বাঙ্গীণ চিকিৎসা ব্যবস্থা স্থাপন করা যায় কিনা সেই ব্যাপারে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যেখানেই বিনামূল্যে কিছু একটা সরবরাহ করা হবে সেখানেই চুরির সুযোগ থাকবে। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদলে বাংলাদেশের সকলকে বেসরকারি স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনা যেতে পারে। সকলের জন্য বীমা থাকাটা বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং সেটা তখনই সম্ভব হবে যখন বাংলাদেশ সরকার নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের বীমার মাসিক কিস্তি প্রদানের দায়িত্বটা নিতে পারবে। বেসরকারি বীমা সংস্থাগুলো প্রতিযোগিতামূলক একটি ভুবনে বিভিন্ন বেসরকারি ডাক্তার ও বেসরকারি হাসপাতাল মারফত জনগণকে স্বাস্থ্য সেবা দিবে। বীমার আওতায় মানুষ বিনামূল্যে সকল ওষুধ কিনতে পারবে। সকল রকমের অস্ত্রোপ্রচার এই সকল বীমার আওতায় আসবে যাতে কোনো রোগী বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসার জন্য কোনো অর্থ ব্যয় করতে না হয়। খেয়াল করবেন যে যুক্তরাজ্যের মতো করে আমি একটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এবং সরকারি স্বাস্থ্য সেবার পক্ষপাতী নই। এবং এর কারণ বাংলাদেশের দূর্নীতি।
স্বাস্থ্য একটি মৌলিক অধিকার। এবং সেটার লভ্যতা একটি মানুষের টাকার থলির আয়তনের উপর নির্ভর করতে পারে না। বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ যদি নিশ্চিত থাকতে পারে যে তারা সকলেই প্রয়োজন অনুসারে সমানভাবে স্বাস্থ্য সেবার দ্বারস্থ হতে পারবে, তাহলে মানসিকভাবে সকলের মাঝেই এক প্রকার স্বস্তি, শান্তি ও সাম্যতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। পশ্চিমা ইউরোপে মানুষের জীবন ধারার ব্যবধান আমাদের দেশের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম হওয়ার এটা একটা বড় কারণ।
এবার আসি শিক্ষার প্রসঙ্গে। বাংলাদেশের কোনো কোনো শিশু বাংলা ছড়া বা গল্প পড়ছে, কোনো কোনো শিশু ইংরেজিতে টুইঙ্কল টুইঙ্কল পড়ছে, আবার কোনো কোনো শিশু আরবি ভাষার আলিফ বা তা সা পড়ছে, এটাকে প্রাথমিক স্তরে খুব একটা বেখাপ্পা মনে না হলেও এই চিত্রটিই যখন আরো কয়েক বছর পর অবলোকন করছেন তখন কী দেখতে পারছেন? বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন তিন ধারার ও তিন রকমের মানসিকতার ছাত্রছাত্রীর চাষ করেনি? আপনারা খেয়াল করেননি ইংরেজি মাধ্যমের তরুণ-তরুণীদের মাঝে নিজের দেশ, সমাজ, ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে জ্ঞান ও সচেতনতার কতটা অভাব? আপনারা খেয়াল করেননি মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্ররা আরবি, ফারসি, উর্দু এবং ইসলামি জ্ঞান সম্বন্ধে কিছুটা পারদর্শী হলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস, চেতনা ও বাঙালিয়ানা সম্বন্ধে কতটা অজ্ঞ এবং উদাসীন? এরাই যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে দেশ ও সমাজের হাল ধরবে তখন এদের এবং বাংলা মাধ্যম থেকে বের হয়ে আসা মানুষদের মাঝে মিল মহব্বত বলতে কিছু আশা করেন কি? এবার আমি একটু গোড়ার দিকেই দৃষ্টিপাত করতে চাই।
বাংলাদেশ এখনো একটি একমুখী শিক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছাতে পারেনি এবং এর ফলাফল হচ্ছে একটি শ্রেনিবিভক্ত ও সমন্বয়হীন জনগোষ্ঠী। এই একমুখী শিক্ষার তাৎপর্য সম্বন্ধে সবাই সচেতনও নয়। কিন্তু এই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থার অভাব বাংলাদেশের বিভাজনের একটা বড় কারণ। ছোট উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীরা বাংলা মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীদের “ক্ষ্যাত” মনে করে। ইংরেজি এবং বাংলা উভয় মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীরা আবার মাদ্রাসা ছাত্রদের হেয় প্রতিপন্ন করে। উপরন্তু, একটি ভ্রান্ত ধারণা থেকে বাংলা মাধ্যমের ছাত্ররা দিবা স্বপ্ন দেখে তারা যদি ইংরেজি মাধ্যমে পড়তে পারতো! এই প্রহসনের জন্য আমরা সবাই দায়ী। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে যেই জাতিটি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে পেরেছে সেই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার এই অবস্থা হবে কেন? ইংরেজি ও আরবি মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের নামে বাংলাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছে কেন?
কোন শিশু কোন ধরণের শিক্ষা পাবে তা অনেকাংশে নির্ধারণ করে দিচ্ছে তার অভিভাবকের টাকার থলির আয়তন। সেটাই আবার এই কৃত্রিম স্তরের পাহারটির হালচাষে অবদান রাখছে। ধর্ম শিক্ষার জন্য যে মাদ্রাসার প্রয়োজন, সেই যুক্তি এখন খোঁড়া যুক্তি। মাদ্রাসা শিক্ষা একটা ব্যবসা যার মাধ্যমে হুজুর এবং ইমামরা তাদের আয় রোজগার নিশ্চিত করে থাকে। ধর্ম শিক্ষা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঘরের ভেতর সম্ভব এবং সেটা সকল ধর্মের অনুসারীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ইংরেজি শেখার জন্য একটা ভিন দেশের পাঠ্যক্রম অনুসরণ করতে হবে না, চার্লস ডিকেন্স পড়া লাগবে না। এখানেও ব্যবসা চলছে নির্লজ্জভাবে।
একটা স্বাধীন এবং ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের শিক্ষার রূপ হওয়া উচিৎ সকল স্তরে বাংলা মাধ্যমে একটি একমুখী, ধর্মনিরপেক্ষ, বাংলা সাহিত্য ও সংষ্কৃতিমনা, উদারপন্থী, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগর ভিত্তিক, মুখস্তবিদ্যা বিহীন, চিন্তাশীল, যুক্ততর্কমণ্ডিত, গবেষণা ভিত্তিক, অনুসন্ধিৎসু শিক্ষা ব্যবস্থা যা হবে সকলের জন্য সমানভাবে লভ্য। এখানে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে আধুনিক কায়দা অবলম্বন করে সবাইকে ইংরেজিটাও শিখিয়ে দেয়া হবে। এই শিক্ষা ব্যবস্থাটিকে সবার জন্য সমানভাবে লভ্য কীভাবে করা হবে সেটা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কের অবকাশ আছে যেটাকে আমি সাদরে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আগেই বলেছি যে একটি দূর্নীতিপরায়ণ দেশে সরকার কতৃক এবং বিনামূল্যে প্রদিত সব কিছুতেই চুরির পথ খোলা। তাই স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলোতে প্রচলিত ব্যবস্থা আমাদের দেশে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নাও হতে পারে। আমার মতে সকলের জন্য উন্নতমানের সরকারি এবং বিনামূল্যে প্রথম শ্রেণি থেকে স্নাকতোত্তর পর্যন্ত শিক্ষাই হচ্ছে আদর্শ। কিন্তু সেটা সম্ভব না হলে অন্য উপায়েও যদি এই একমুখী শিক্ষাকে সকলের জন্য সমানভাবে লভ্য করা যায় তো তাতেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে।
তবে যেভাবেই এই শিক্ষা সকলের জন্য লভ্য করা হউক না কেন, বিপুল সরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে সেটাকে আগে খাড়া করে তুলতে হবে। তারপরে ইংরেজি ও আরবি মাধ্যমের ব্যবসাগুলো এমনিতেই লুপ্ত হয়ে যাবে ছাত্রছাত্রীদের অভাবে। তখন আর সেগুলোকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্ন উঠবে না। আর এই ব্যবস্থা নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই ব্যবসাগুলোকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে আমি নই। সেখানে পড়া বর্তমান ছাত্ররা যাবে কোথায়?
বাংলাদেশের সংবিধানের চার মূলমন্ত্রের মধ্যে দুটো হচ্ছে সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা। সংবিধানে এই দুটোরই উপস্থিতি এখন হাস্যরসের রূপ নিয়েছে। তবে সমাজতন্ত্র বলতে বাম অর্থনীতি না বুঝে অন্য উপায়ে মানুষের মাঝে সাম্যতা আনাকে বুঝে নেয়া যায়। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত বা সেই ধরণের বিল্পব আনতে পারলে সেই মূলমন্ত্রের প্রতি কিছুটা হলেও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা সম্ভব। আর ধর্মনিরপেক্ষতা নামক মূলমন্ত্রের প্রতি আনুগত্যটি একটি রাজনৈতিক ব্যাপার যেটা এই লেখাটির বিষয়বস্তু না। তবে প্রস্তাবিত একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থাটি অবশ্যই ধর্মনিরপেক্ষ হতে হবে। এবং এর সাথে এও মেনে নিতে হবে যে হেফাজত জাতীয় গোত্রের অনুরোধে পাঠ্যপুস্তকগুলোকে কালিমালিপ্ত করা যাবে না। বাংলাদেশে তাদের চালিত কওমি মাদ্রাসাগুলোরও কোন স্থান থাকতে পারবে না।
আমার পূর্ব প্রজন্ম, বর্তমান প্রজন্ম এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অনেককেই বলতে শুনি যে বাংলাদেশে হিন্দুরা খুব ভালো আছে! তারা খুব সম্ভবত ভারত এবং অন্যান্য যে সকল দেশে মুসলমানরা সংখ্যালঘু হয়ে বাস করছে সেসব দেশের সাথে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের অবস্থানের তুলনা করছেন। এই তুলনাটা কেন প্রাসঙ্গিক হবে? অন্য দেশের সাথে বাংলাদেশের তুলনাটা কেন করতে হবে? এটা কি সহজে অনুধাবন করা সম্ভব নয় যে বাংলাদেশের ব্যাপার বাংলাদেশেরই? এই দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতির মাপকাটিটা নির্ধারণ করবে এক মাত্র বাংলাদেশিরাই? পার্শ্ববর্তী দেশ বা দূর দূরান্তের দেশে কী হচ্ছে সেটার দায় আমাদের দেশের হিন্দু সম্প্রদায় কেন বহন করবে?
এর চেয়ে বড় করা কথা হচ্ছে যে বাংলাদেশে আমাদের হিন্দু ভাই-বোনরা ভালো আছে কি নেই এবং কতটুকু ভালো আছে বা কতটুকু খারাপ আছে তা উপস্থাপন করার এখতিয়ার এক মাত্র আমাদের হিন্দু ভাই-বোনদেরই। আর কারোর না। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সম্প্রদায়ের বিন্দু মাত্র অধিকার নেই এখানে কোনো কথা বলার, হিন্দুদের কথা অগ্রাহ্য করার বা সেটার বিরূদ্ধ হওয়ার। কারণ সংখ্যালঘু হওয়ার ব্যক্তিগত, দৈনিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা কোনো দিনও সংখ্যাগরিষ্ঠদের হয় না। হাজার চেষ্টা করেও না। খাতা-কলমে কিছু কল্পনা করা যায়, ধারণা পোষণ করা যায় ইত্যাদি। কিন্তু যেই মানুষটা কোনো দিন বাচ্চা প্রসব করেনি, তার পক্ষে প্রসব দেয়ার অভিজ্ঞতা উপলব্ধি করা একেবারেই অসম্ভব।
আমাদের দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বা ধর্মীয় সম্প্রীতি নিয়ে আলোচনা শুরু করতে হলে এটাই হওয়া উচিৎ সকলের আদ্যস্থল। একজন হিন্দু মানুষ না হয়ে কখনোই কোথাও বক্তব্য রাখতে যাবেন না যে হিন্দুরা আমাদের দেশে খুব ভালো আছে বা ভালোই আছে। তারা সেটা আছে কি নেই, সেটা তাদের কাছ থেকেই মনোযোগ দিয়ে শুনবেন, বোঝার চেষ্টা করবেন, তাদের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করবেন এবং তারা ভালো না থাকলে, আপনি কী কী কাজ করলে তারা ভালো থাকতে পারবে তা তাদের সাথে আলাপচারিতার মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠা করুন বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে।
একজন হিন্দু ফেসবুক ব্যবহারকারী হেফাজতের নেতা মামুনুল হককে সমালোচনা করলো দেখে সুনামগঞ্জের একটি গ্রামে অজস্র হিন্দু বাড়িঘর ও মন্দির লন্ডভন্ড করে দেয়া হলো। এরপরেও কি আপনারা বলবেন যে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়টি মুসলমান সম্প্রদায়ের সাথে একই দুনিয়ায় বাস করছে? হেফাজতিরাই তো প্রকাশ্যে ভিন্ন ধর্মালম্বীদের নিয়ে যা তা খুশি বলে আসছে। কই? হিন্দুদেরকে তো মুসলমানদের বাড়িঘর, মসজিদ ইত্যাদি ভাঙচুর করতে দেখিনি? আপনাদের কি লজ্জা করেন না হিন্দুদের অবস্থান সম্বন্ধে নিজেদের অভিমত বা মূল্যায়নকে অধিকতর গুরুত্ব দিতে?
স্বাধীনতার পূর্ব এবং তার পর থেকে আজও রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবানরা (তারা যেই দলেরই হোক না কেন) ধারাবাহিকভাবে হিন্দুদের জমি দখল করে আসছে। আজানের সময়ে উলু ধ্বনি চলবে না, অথচ উলু ধ্বনির সময়ে আজানের উপর নিষেধাজ্ঞা নেই, এগুলো কি হিন্দু ও মুসলমানদের সমান অবস্থানের পরিচয়? কবে বুঝতে পারবেন যে বাংলাদেশে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে এই অসমান পরিস্থিতির একটা সাংবিধানিক ভিত্তি জেনারেল এরশাদ তৈরি করে দিয়ে গেছেন যেটা অতীত প্রতিশ্রুতি সত্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপড়ে ফেলেননি। যত দিন বাংলাদেশের সংবিধানে একটা রাষ্ট্রধর্ম উল্লেখ করা আছে, তত দিন সেই রাষ্ট্রের চোখে সেই ধর্মের বাইরের সকল মানুষ দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। আর জেনারেল জিয়ার কেরামতিতে সংবিধানে যদি বিসমিল্লাহ থাকে তো সেই সংবিধান ভিন্ন ধর্মালম্বী বা নাস্তিকদের কাছে সমানভাবে প্রিয় হতে পারে না।
তাই ধর্মীয় সম্প্রীতির সবচেয়ে প্রথম শর্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরঙ্কুশ ধর্মনিরপেক্ষতা। এখানে ধর্মীয় সব ব্যাপারেই রাষ্ট্র থাকবে অন্ধ। আসুন এটা প্রতিষ্ঠা করার জন্য মরিয়া হয়ে পড়ি। এতে হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরের উপর আক্রমণ কিছুটা হলেও কমবে কারণ সেগুলোকে রাজনৈতিকভাবে উস্কানি দেয়ার মতো মানুষ তখন কমে যাবে। রাজনৈতিক স্বার্থে রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্ম গোষ্ঠীগুলোকে দুধ-কলা খাওয়ানোর পথটাও সংকুচিত হবে।
অনেক আবাল মুমিনরা বলে থাকে যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র মানে ৯০% মানুষ অর্থাৎ মুসলমানরা যা বলবে তাই। হ্যাঁ! সেটা ভোটের বাক্সে। কিন্তু একটি দেশে প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা মানে সংখ্যাগরিষ্ঠদের ইচ্ছা কায়েম করার সময়ে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ যেন কখনোই ক্ষুন্ন না হয় সেই পরষ্পর বিরোধী সংগ্রামটির সুষ্ঠ পরিচালনা। অতএব গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। বাংলাদেশে বর্তমানে এই দুটোর একটারো বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে।
আবালদেরকে এটাও বলতে শুনেছি যে বাংলাদেশে রাষ্ট্রভাষা থাকলে রাষ্ট্রধর্মও থাকতে হবে। তাদেরকে দুটোর মধ্যে পার্থক্যটা সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দিতে হয় বলে পরিতাপ হচ্ছে। একজন মানুষ একটু চেষ্টাতেই একটার বেশি ভাষা রপ্ত করতে পারে। কিন্তু সেই মানুষটা দেশের সমান নাগরিক হওয়ার উদ্দেশ্যে অত সহজে একই সাথে বিভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী এবং সেগুলোর অবলম্বনকারী হতে পারে না। দেশের প্রচলিত ধর্মগুলো কখনোই সেটার অনুমতি দেয়নি। আর একই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে ধর্ম পরিবর্তন করাটা একজন মানুষের জন্য ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক আঙ্গিকে কঠিন এক পদক্ষেপ। কাজেই বাংলাদেশে রাষ্ট্রভাষার মাধ্যমে আমরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক তৈরি করিনি কিন্তু রাষ্ট্রধর্মের মাধ্যমে তা করেছি।
আমার সম্প্রতি লেখা “বাংলা ভাষার প্যাঁচাল” নামের প্রচ্ছদটির পর এই লেখাটির একটি বিশেষ অনুরোধ আসাতে এই লেখাটিতে আমাকে একটি ভিন্ন অঙ্গনের দিকে মনোযোগ দিতে হয়েছে। “চেয়ার” ও “টেবিল” নামের বস্তুগুলো ছিল ইংরেজদের মাধ্যমে আমাদের মাঝে প্রচলিত করে দেয়া কিছু আসবাবপত্র, যেগুলোর বাংলা প্রতিশব্দ (কেদারা, কুর্সি ইত্যাদি) তেমন প্রচলিত হতে পারেনি। যুক্তি উপস্থাপন করা যায় যে যেহেতু এই বস্তুগুলোই ছিল বিদেশি এবং যেই সংষ্কৃতি থেকে সেগুলো আমাদের কাছে এসেছিল, সেখানে “চেয়ার” বা “টেবিল” শব্দগুলো ছিল সর্বব্যাপী, সেহেতু সেগুলোর বাংলা প্রতিশব্দ প্রতিষ্ঠিত করতে কেউ তেমন মাথা ঘামায়নি। চেয়ার এবং টেবিল আমাদের ভাষাতে সেই নামেই পরিচিত হয়ে গিয়েছে।
পর্তুগীজরা ইংরেজদেরও অনেক আগে আমাদের মাঝে “সাবোন” নামে গোসল করার একটা উপাদান নিয়ে এসেছিল। আমাদের মুখ সেই শব্দটিকে সময়ের সাথে সাথে একটু পালটে দিয়ে সাবান বানিয়ে ফেলেছে। ফরাসীদের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি “রেস্তোরাঁ”। বাংলা ভাষায় এরকম আরো অনেক বস্তু বিষয়ক শব্দের উৎপত্তি হচ্ছে ভিন্ন সংষ্কৃতি ও ভাষা। প্রাচীন বাংলায় বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে বণিকরা এসেছিলেন – কেউ কেউ বাংলাকেই তাদের ভূমি হিসেবে বেঁছে নিয়েছিলেন। এই প্রক্রিয়ার ফলে তাদের আনা অনেক জিনিষগুলোর নাম আমাদের ভাষায় ঢুকে গিয়ে বাংলা ভাষাকে করেছে সমৃদ্ধ। এর আগে বাংলা ভাষায় এগুলোর নামই ছিল না কারণ আমাদের এই অঞ্চলে হয়তো সেই বস্তুগুলোরই কোনো হদিস ছিল না।
বর্তমান যুগে প্রযুক্তি আমাদের কাছে নিয়ে এসেছে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সিমকার্ড আরো কত কী! তার আগে এসেছে ক্যালকুলেটর, ফোন ও টেলিভিশন। এগুলোর প্রতিশব্দ বাংলা একাডেমি স্থাপন করার চেষ্টা করেনি এবং সেটা নিয়ে কারো মাথা ব্যথাও নেই। আমি বলবো যে এটা মেনে নেয়ার জন্য কিছু যুক্তি আছে এবং সেটা কী তা উপরে উল্লেখ করেছি। কিন্তু সবার কাছে আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে এটার সাথে বর্তমান যুগে সকলের “বাংলিশ” বলার সম্পর্কটা কোথায়? বাংলিশ শব্দটির একটি মানে হচ্ছে বাংলা কথার মাঝে অর্ধেক বা অনেক শব্দেরই ইংরেজিটা বলা বা লেখা। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করতে পারিঃ “বাংলা একটা রিচ ল্যাঙ্গুয়েজ, আমি এই ভাষা ইউজ করতে ভালোবাসি”। আরো শুনতে পাওয়া যায়ঃ “আমি তোমাকে লাভ করি”। আমার এটাও শোনার দূর্ভাগ্য হয়েছেঃ “একটা কান্ট্রির এডমিনিস্ট্রেশন মাদার টাঙে হওয়া উচিৎ”।
ব্যঙ্গ করে আমি ফেসবুকে বেশ আগে এরকম একটা স্থিতি দিয়েছিলামঃ “একুশের মান্থ আসলে ল্যাংগুয়েজ মুভমেন্টের স্টোরিটা আমাকে অনেক ইন্সপায়ার করে”। এই ধরণের কথাবার্তার অবির্ভাব কীভাবে হলো, কারা মূলত এই সব শব্দদূষণের জন্য দায়ী, সেটা নিয়ে আমার “বাংলা ভাষার প্যাঁচাল” নামের প্রচ্ছদে বিশদ বিশ্লেষণ করেছি। এই লেখায় শুধু প্রশ্ন করবো যে বাংলা ভাষায় সাবান আর কম্পিউটারের আগমন কি নিজের জাত বাড়িয়ে, ঢং করে উপস্থিত বাংলা শব্দকে দুমড়ে মুচড়ে প্রতিস্থাপন করে ইংরেজি শব্দটা ঢোকানোর মতোই একটা বিষয়? পরের বিষয়টিকেও কি ভাষার চলমান প্রক্রিয়া ও বিবর্তন হিসেবে ধরে নেয়া যায়? যেই কারণে বাংলা ভাষার শব্দ গণনা সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই কারণেই কী “ভাই” হয়ে গিয়েছে “ব্রো”? বাজারে পণ্যের “দাম” হয়ে গিয়েছে “প্রাইস”? কাপড়ের রং হয়ে গিয়েছে “কালার”?
নগ্নভাবে বুঝিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি যে পরের বিষয়টা বাংলা ভাষাটাকে সমৃদ্ধ করছে না। বরং একটি ক্ষতিকর (কেন সেটা আগের লেখায় বর্ণনা করেছি) প্রবণতার আদলে সুন্দর এবং যথাযথ কিছু বাংলা শব্দ প্রতিস্থাপন করে ইংরেজি শব্দের আগমন ঘটিয়ে কালের গর্ভে সেই বাংলা শব্দগুলো হারিয়ে ফেলার পথ সুগম করে দেয়া হচ্ছে। এই পার্থক্যটা সূক্ষ্ম হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাওয়ায় গা ভাসানোর আগে সবাইকে একটা ব্যাপার অনুধাবন করতে অনুরোধ করছি। দিন শেষে যারা অনবরত বাংলিশ বলেন ও লিখেন, তারা বাংলা বা ইংরেজি, কোনোটারই পারদর্শিতা দাবী করতে পারেন না। মজার ব্যাপার হচ্ছে যে এই মানুষগুলো বাংলিশ বলে তারা যে ইংরেজি জানেন সেটাই সবাইকে বোঝাতে চেষ্টা করছেন। তবে আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে যে তারা প্রকৃতপক্ষে তেমন ইংরেজিই জানেন না। যারা বাংলার সময়ে বাংলা, ইংরেজির সময়ে ইংরেজি – এই মনোভাব পোষণ করেন, তারাই প্রকৃতপক্ষে ইংরেজি জানেন, সাথে বাংলা তো বটেই।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটা ব্যাপার উল্লেখ না করলেই নয়। ঢাকার এক উদীয়মান আবাসিক এলাকায় সেটার চেয়েও উদীয়মান এক ভদ্র মহিলা অদূরে একটা গরু হেঁটে যাচ্ছে দেখে তার বাচ্চা মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ “বেবি! দেখো, কাও যাচ্ছে”। আমি যদি বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী হতাম, তাহলে এই প্রকার ঢঙের প্রতিদান হিসেবে এই সকল ভদ্র মহিলা (সাথে ভদ্র লোক, তরুণ, তরুণী, যুবক, যুবতি)দেরকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় গ্রেফতার করে বিনা জামিনে দশ বছর হাজতে আটকে রাখার বিধানের সুপারিশ করতাম। এই মনোভাব পোষণ করার জন্য আমাকে যদি “ভাষা মৌলবাদী” বলা হয়, তো সেই সুনাম আমি আনন্দের সাথে মাথা পেতে নেব। জীবনটাকে স্বার্থক মনে করবো।