ইসরায়েলের মাঝে পশ্চিম তীর ও গাজা (ফিলিস্তিনি)

রিয়াজ ওসমানী

৮ নভেম্বর ২০২২

বাংলাদেশের গণমাধ্যম, মোল্লা সমাজ ও বামপন্থী গোষ্ঠী যুগের পর যুগ ধরে ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাতটিকে একবারেই একপেশে করে উপস্থাপন করে এসেছে। এর ফলে বাংলাদেশে বংশের পর বংশের মনে এক প্রকার বাতিক জন্মেছে হাওয়া বাতাসের বেগ বাড়লে বা কমলেও দিনে অন্তত একবার ফিলিস্তিনিদের জন্য মায়াকান্না করে নিজের বিবেক, আবেগ, ইমান সব কিছুর সাফাই গাইতে। পৃথিবীর সকল ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু যেন এটাই, আর যোগসূত্র থাকুক বা না থাকুক, আন্তর্জাতিক সকল সংঘাতের গোড়াতেই যেন ফিলিস্তিনিদেরই কথা সবার আগে মনে পড়ে।

কে কার জায়গা দখল করে আছে এই প্রশ্নটাই যেমন ভুল, ঠিক তেমনি তার উত্তরটাও সহজ নয়। ইহুদিরা যে এই অঞ্চলের আদিবাসী সেটাতো ঐতিহাসিকভাবেই প্রমাণিত। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর ইসরায়েল দেশটি স্থাপনের ফলে ফিলিস্তিনিদের যে চরম ক্ষতি হয়েছে সেটাও অনস্বীকার্য। এবং এর সমাধান যে দুইটা রাষ্ট্র তা দুনিয়া অনেক আগেই মেনে নিয়েছে।

কিন্তু সেটার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুই পক্ষেরই চরমপন্থীরা। ফিলিস্তিনিদের মধ্যে রয়েছে হামাস নামের একটি মৌলবাদী ও সন্ত্রাসী দল যা প্রতিদিন ইসরায়েল ধ্বংসের ডাক দেয় এবং কয়েক বছর পর পর ইসরায়েলে রকেট মারার অভিযান শুরু করে ইসরায়েলকে চরমভাবে প্রতিশোধ নিতে বাধ্য করে। আর ইসরায়েলিদের মধ্যে রয়েছে বড় একটা ডানপন্থী গোষ্ঠী যারা কোনো অজুহাতেই ফিলিস্তিনিদের জন্য জমি ছেড়ে দিতে নারাজ।

এই পরিস্থিতিটির সমাধান করতে কয়েক মার্কিন প্রশাসন তাদের মেধা ও শ্রম ব্যয় করেছে। কিন্তু প্যালেস্টাইন নামের একটি রাষ্ট্রের সাথে ইসরায়েলের সীমানা কোন কোন জায়গা দিয়ে যাবে তার কোনো সমঝোতাতেই দুই পক্ষ এখন পর্যন্ত আসতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয় জোর করে একটা সীমানা তৈরি করে দেওয়া।

ফলে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা দুর্দশাই রয়ে গিয়েছে আর বাংলাদেশের গণমাধ্যম দায়িত্বশীলভাবে শুধু সেই সংবাদটি প্রচার করে এসেছে যখন ইসরায়েলি সেনার হাতে কোনো ফিলিস্তিনি মরে। সেই হত্যাকান্ডটি যে অনেক সময়েই ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকে প্রথম হামলাটির প্রতিশোধ, সেটা আর উল্লেখ করা হয় না। ফিলিস্তিনিরা যখন ইসরায়েলিদের আক্রমণ করে তখন বাংলাদেশের অগারাম গণমাধ্যম হয়ে যায় বোবা।

সব কিছুর ফল দাঁড়িয়েছে যে বাংলাদেশিরা একটি চরম ইহুদি আর পশ্চিমা বিদ্বেষী মনোভাব নিয়ে রাতের বেলা ঘুমাতে যাচ্ছে। ইতিহাস প্রকৃতভাবে উদঘাটন করার বা জানার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা বা আগ্রহ পোষণ না করে হুজুকে চলেফিরে দুনিয়াটার সম্বন্ধে একটা জগাখিচুড়ি ধারণা নিয়ে বাস করছে আর নবপ্রজন্মের মস্তিষ্ক কলুষিত করছে।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s