
রিয়াজ ওসমানী
১৩ অক্টোবর ২০২২
ইউরোপের বামপন্থী এবং মধ্যপন্থীরা ইচ্ছা করলেও যেটা প্রকাশ করতে পারে না, তা ডানপন্থীদের মুখ থেকে এখন সহজেই বের হয়। আর তাই অভিবাসনের কারণে নিজেদের দেশের চেহারা বদলে যাওয়াকে যারা ভয় পাচ্ছে, তারা তাদের মাঝে খুঁজে পেয়েছে তাদেরই রাজনৈতিক প্রতিনিধি। সেই রাজনীতিবীদরা অন্য দিকে বিশ্বায়নের কারণে সেই ভীতু মানুষদের বর্তমান সময়কার জীবন যাত্রার মানের অবনতিকে পুঁজি করে ক্ষমতায় আসার পথ খুঁজে পেতে শুরু করেছে৷ এই পরিস্থিতি কিছুটা বিপদজনক।
বহুসংষ্কৃতিবাদ বিষয়টি ইউরোপের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে বেশি সফল। এর কারণ মার্কিন নাগরিক হতে হলে ইংরেজিভাষী, খ্রিস্ট ধর্মালম্বী ও শ্বেতাঙ্গ হবার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যে কেউই যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান, কিছু আদর্শ ও আইন-কানুনের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে সময়ের সাথে সাথে সত্যিকার অর্থেই আমেরিকান হয়ে যেতে পারে। কেউ একটা টু শব্দ করে না। কিন্তু ইউরোপে বহুসংষ্কৃতিবাদের অভিক্রিয়াটি ব্যর্থ। তার কারণ সেখানে একজনের নাগরিক হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা এখনও নির্ভর করে সে কোথাকার আদি মানুষ, তার গায়ের চামড়ার রঙ কী, তার ধর্ম কী, তার মাতৃভাষা কী, তার বেশভূষা কী ইত্যাদির উপর। তাই যত সহজে একজন বাংলাদেশি মানুষ আমেরিকায় গিয়ে সেখানকারই একজন হয়ে যেতে পারে, সে বা অন্য কোনো বাংলাদেশি মানুষ, অথবা ইউরোপের স্থানীয় লোকদের চেয়ে ভিন্ন কোনো গোত্রের মানুষ ইউরোপের অনেক দেশেই গিয়ে অত সহজেই সকলের চোখে সেই দেশের মানুষ হয়ে যেতে পারে না।
যদি পারতে হয়, তো বারতি চেষ্টা করে অল্প সময়ের মধ্যেই সেই দেশের মানুষগুলোর মতো হয়ে যেতে হয় (যতটুকু সম্ভব)। আর এখানেই আসে মুসলমান অভিবাসীদের নিয়ে বড় ফ্যাকড়া৷ এরা অতি সহজে তাদের নতুন দেশের প্রচলিত সংষ্কৃতি মেনে নেয় না৷ যে সকল এলাকায় এই অভিবাসীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়, সেই এলাকাগুলোকে আগের স্থানীয় মানুষরা আর চিনতেই পারে না। ইউরোপে যারা আজকাল ডানপন্থী রাজনীতিবীদদের নির্বাচিত করছে, তারা এই অপরিচিত পরিস্থিতিটিকে ভয় পেয়েই তা করছে। এর সমাধান সহজে অনুমেয় নয়।