
রিয়াজ ওসমানী
৫ এপ্রিল ২০২২
বাংলাদেশের সংসদে একটি যুগান্তকারী বিল উত্থাপন করা হয়েছে যেটা পাস হলে দেশে প্রায় অনেক কিছুরই ভিত্তিতে বৈষম্য নিষিদ্ধ হয়ে যাবে এবং কেউ সেগুলোর ভিত্তিতে বৈষম্যের শিকার হলে কতৃপক্ষের কাছে তার জন্য প্রতিকার পেতে পারবে। এই বিলটি আইনে পরিণত হলে সেটা বাংলাদেশকে পৃথিবীর সভ্য দেশগুলোর কাতারের কাছে নিয়ে আসতে সহায়তা করবে। তবে বৈষম্য করা যাবে না এমন জিনিষের তালিকায় “যৌন প্রবৃত্তি” (বা সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন) অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এটা একটা বড় রকমের বাদ দেয়া বিষয়। হ্যাঁ, দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারার আদলে বাংলাদেশে পায়ুসঙ্গম দন্ডনীয়। কিন্তু এতে সমকামীরা রাষ্ট্রের চোখে যে অপরাধী হবে সেটা যুক্তিহীন এবং অমানবিক (সমকামিতার সাথে পায়ুসঙ্গমের যোগাযোগটা অতিরঞ্জিত)।
তার উপর ৩৭৭ ধারাটি অনৈতিক, যুক্তিহীন এবং অপ্রয়োজনীয়। আর সমকামীদের নিয়ে ইসলাম বা অন্য কোনো ধর্ম কী বললো, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তা অপ্রাসঙ্গিক। এর কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের দন্ডবিধি বিলেতিদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া “জনসাধারণ আইন” (বা কমন লও) দ্বারা গঠিত, শরীয়া আইন দ্বারা নয় (কোনো দিন সেটা হতেও দেয়া যাবে না)।
কাজেই এই বিলটিতে বৈষম্য করা যাবে না এমন জিনিষের তালিকায় যৌন প্রবৃত্তিকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী আমরা বাংলাদেশে চিরকাল ছিলাম, আছি এবং থাকবো। এবং আমাদের যৌন প্রবৃত্তির ফলে আমরা বাসস্থান, চাকরি ক্ষেত্র, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছ থেকে আজীবন বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকতে পারি না।
আপনাদের যাদেরই কোনো সাংসদ, মন্ত্রী, আমলা ইত্যাদিতের সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ আছে, তাদেরকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি তাদেরকে ব্যাপারটা জানিয়ে দিতে যে এই মহৎ বিলটিতে “যৌন প্রবৃত্তি”কেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বাংলাদেশের সকল মানবাধিকার সংস্থাগুলোকেও এই ব্যাপারে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করছি।
এই বিলটি বহু দিন ধরে তৈরি করা হয়েছে এবং এটি আইনে পাস হলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের অনেক মানুষের উপর। এই উদ্যোগটি প্রতিদিন একটা দেশে নেয়া হয় না। এগুলো কয়েক দশক পর পর হয়। তাই এখানে সমকামীদের ব্যাপারটা উল্লেখ করা না থাকলে বাংলাদেশের একটা জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যত অন্ধকারে থেকে যাবে। বাংলাদেশ সভ্য দেশগুলোর কাতারের কাছে এসেও ঠিক দাঁড়াতে পারবে না। আবার সেই সুযোগ কবে আসবে সেটাও অনুমান করা কষ্টসাধ্য।
আমার কষ্টের বিষয় হচ্ছে যে ২০১৫ সালের দিকে আইন কমিশনের সুপারিশে যখন এই বিলটির খসড়া তৈরি করা হয়, তখন সেখানে যৌন প্রবৃত্তি কথাটা উল্লেখ করা ছিল। মন্ত্রীদের কাছে খসড়াটা আসতে আসতেই সেটা বাদ পড়ে গেল। এমনটা আশঙ্কাও করেছিলাম। আমার সকল সমকামী তথা বৃহত্তর যৌন সংখ্যালঘু বন্ধুবান্ধব এবং শুভানুধ্যায়ীদেরকে এই লেখাটি ঢালাওভাবে প্রচার করতে অনুরোধ করছি।
******************************
বৈষম্যবিরোধী আইনের খসড়া সংসদে – দৈনিক প্রথম আলো
******************************