
রিয়াজ ওসমানী
২৬ অক্টোবর ২০২১
বাহাত্তর সনে লিখিত বাংলাদেশের সংবিধানের চারটা মূলমন্ত্রের দুটো থেকেই বাংলাদেশ আজ বিচ্যুত। এই দুটো হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র। বাকি দুটো হচ্ছে গণতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদ। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্রও মৃত্যু সজ্জায় কিন্তু সেই আলাপ আরেক দিনের। আজকে ধর্মনিপেক্ষতায় কেন এবং কীভাবে ফিরে যাব সেটা নিয়ে আলাপ। এর সাথে সমাজতন্ত্রের মূল আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বর্তমান মুক্ত বাজার ব্যবস্থা কিভাবে চলমান রাখা সম্ভব সেটা নিয়েও আলাপ থাকছে। সমাজতন্ত্র কায়েম করতে হবে বর্তমান যুগের বাস্তবতা থেকেই। প্রাতিষ্ঠানিক সাম্যবাদ (কমিউনিজম) একটা ব্যর্থ রূপরেখা। এই রূপরেখা নিয়ে যারা এখনো দিবা স্বপ্ন দেখেন তারা নতুন করে দেশকে কিছু দেয়ার ক্ষমতা রাখেন না। মানুষে মানুষে সাম্যতার আরেকটা ব্যাখ্যা হতে পারে মানুষে মানুষে বৈষম্য কমিয়ে আনা। এবং সেটা কায়েম করার রূপরেখা পৃথিবীতে আজ প্রতিষ্ঠিত। এই লেখার শেষাংশে সেটা নিয়ে আলাপ হবে। বাহাত্তর সনে ফিরে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতা পূর্ণাঙ্গভাবে ফিরিয়ে আনা এবং সমাজতন্ত্রের একটি পরিবর্তিত ব্যাখ্যা মেনে নিয়ে বাংলাদেশে সেটার বাস্তবায়ন করা।
প্রশ্নঃ বাহাত্তর সনের সংবিধানে কেন ফিরে যাবো? উত্তরঃ কারণ সেই সংবিধান থেকে বিচ্যুত হওয়ার ফলে আজ বাংলাদেশ একটা সাম্প্রদায়িক, অচেনা দেশ এবং যেই দেশে মানুষে মানুষে বৈষম্য বেড়েই চলছে, যেটা অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উভয়ই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই বলুন আর সংবিধান লেখকদের দর্শনই বলুন, দুটোর কোনটাই বাংলাদেশের বর্তমান চেহারার উৎস বলে মনে হওয়ার কোনো কারণ নেই। শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা আজ অপরপ্রান্ত থেকে দীর্ঘশ্বাস ব্যতীত আর কিছু ফেলছে বলে মনে করলে ভুল হবে। সংবিধানের লেখকরা চেয়েছিলেন এমন একটা দেশ যেখানে সকল ধর্মের সকল মানুষ রাষ্ট্র ও সমাজে সমান। সেখানে মানুষে মানুষে বৈষম্যও থাকবে না। আজ সমাজ নিয়ে কথা নয়, কথা রাষ্ট্র নিয়ে। ধর্মনিরপেক্ষতার মানেই হচ্ছে রাষ্ট্রের চোখে সকল ধর্মের মানুষ হবে সমান। এর অর্থ এও দাঁড়ায় যে সকল ধর্ম হবে সমান। রাষ্ট্রের চোখে বিশেষ কোনো ধর্মকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না। দিলেই বাকি ধর্মগুলোর অবস্থান নিম্নতর পর্যায় চলে যায় এবং সেই বাকি ধর্মের অবলম্বনকারীরাও সেই নিম্নস্তরে চলে আসে।
বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ অর্থাৎ মুসলমানদের কাছে জেনারেল এরশাদ তার সামরিক ক্ষমতা আরো জনপ্রিয় করে তোলার জন্য ১৯৮৮ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম বানিয়ে বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্ট ধর্মালম্বী, অন্যান্য ধর্মালম্বী এবং নাস্তিকদেরকে যে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানিয়ে ফেলেছেন সেটা কি নব প্রজন্মের কাছে অধিক যুক্তি দিয়ে বোঝানোর প্রয়োজন আছে? ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা দেয়ার পর রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সমাজের বিভিন্ন স্তরে সেই ধর্ম সময়ের সাথে সাথে যে অধিক পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে সেগুলোর জলজ্যান্ত প্রমাণ তুলে ধরার প্রয়োজন আছে কি? এই অধিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং তার বাহ্যিক প্রতিফলন যে ধর্মনিরপেক্ষতা নামক সাংবিধানিক স্তম্ভের পরিপন্থী সেটার বিশ্লেষণ কি তুলে ধরা দরকার? আর একটা রাষ্ট্রধর্ম থাকার ফলে সেই ধর্মের বাইরের মানুষদের নিম্নস্তরে চলে আসাটা যে গণতন্ত্রের সাথে সাংঘর্ষিক সেটা কি উল্লেখ করে দিতে হবে? অনেক মুমিনদের মুখে শুনেছি যে দেশের ৯০% মানুষ (অর্থাৎ মুসলমান)রা যা চাইবে সেটাই গণতন্ত্র। কখনোই না। হ্যাঁ! ভোটের বাক্সে সংখ্যাগরিষ্ঠদের ইচ্ছাই পূরণ হবে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র আরেক জিনিষ। প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠদের ইচ্ছা এমনভাবে পূরণ করতে হবে যে (যে কোনো) সংখ্যালঘুদের স্বার্থ যেন ক্ষুণ্ণ না হয়। এই পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক লড়াইটার নাম গণতন্ত্র।
মুমিন থেকে শুরু করে সুশীল সমাজের অনেকেই বলে থাকেন যে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। অবশ্যই তা নয়। রাষ্ট্রীয় ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা সেভাবে কে দিয়েছে? ধর্ম তো বিশ্বাস ও পালন করছে মানুষ। রাষ্ট্র তো ধর্ম পালন করছে না! রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম না থাকলেও মানুষ যে ধর্ম পালন করবে সেখানে বাধা আসছে কোথা থেকে? মুমিনদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে মারছি কোরআনের আয়াত এবং হাদিসের উক্তি দিয়ে দেখিয়ে দিতে বাংলাদেশের সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম উঠিয়ে দিলে ইসলামের ক্ষতি কীভাবে হচ্ছে! রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াও বাংলাদেশে আগে কি মুসলমান ছিল না? সমস্যাটা কোথায়? আমি বলি সমস্যাটা কোথায়। সমস্যাটা অনুভূতি নামক এক অযৌক্তিক জায়গায়। এই জায়গায় যুক্তির কোনো ঠাই নেই। আছে অজ্ঞতা এবং অন্ধবিশ্বাসের একটা বিষফোঁড়া। আছে অনুর্বর মস্তিষ্ক এবং চেতনার একটা ফাঁকা ও উত্তপ্ত আবেগ।
এই আবেগটাকে যে জেনারেল এরশাদ কীভাবে কাজে লাগিয়ে মুমিন সবাইকে কদু বানিয়েছেন তার ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে কি? ব্যক্তিগতভাবে একজন লম্পট মানুষ কি ইসলামের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা থেকে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম এনেছিলেন? না, সেই কারণে আনেননি। এনেছিলেন বাংলাদেশের অধিক মানুষদেরকে কদু বানাতে এবং সেই কাজে তিনি সাঙ্ঘাতিকভাবে সফল হয়েছেন। সেই ধারা অনুসরণ করে বিএনপি-জামাত দেশ চালিয়েছে এবং আওয়ামী লীগ হেফাজত লালন করেছে। উল্লেখ্য যে এরশাদ সাহেব সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম আনার পর প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলই সেটার বিরোধিতা করেছিল। আজ ক্ষমতার লোভে এরা সংবিধানের এই জায়গাটি স্পর্শ করতে অপারগ এবং তার একটি মাত্র কারণ মানুষের সেই অযৌক্তিক আবেগের ভয়।
অথচ আজ বাংলাদেশের একটা রূপ বিশ্লেষণ করি? ১৯৭৫ সালের পর জেনারেল জিয়াউর রহমানের কেরামতির ফলে ধীরে ধীরে বিদেশ থেকে পুনর্বাসিত জামাতে ইসলামী সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে প্রবেশ করে মুসলমানদেরকে শিখিয়েছে যে অন্যদের তুলনায় তারাই শ্রেষ্ঠ, তাদের ধর্মই প্রকৃত ধর্ম। ভিন্ন ধর্মালম্বী এবং নাস্তিকরা সৃষ্টির সেরা জীব তো নয়ই বরং তারা হচ্ছে বর্জ্য পদার্থ। এই চিত্রটির সাথে যোগ হয়েছে আলেম সমাজ যেভাবে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং অন্যান্য পেশাজীবীদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছে। এর ফলে মসজিদ, মাদ্রাসা ও ওয়াজ মাহফিলে কীভাবে দায়মুক্তভাবে বিভিন্ন “ধর্মীয়” বক্তারা ভিন্ন ধর্মালম্বীদের উদ্দেশ্যে বিষদগার ছড়িয়েছে, সাধারণ মুসলমানদের মনে অন্য ধর্মালম্বী এবং নাস্তিকদের বিষয়ে বিষ ঢুকিয়ে দিয়েছে, তার ফল আমরা আজ দেখছি। সম্প্রতি শারদীয় পূজার সময়ে হনুমানের পায়ে কোরআন রাখা হয়েছে শুনে কানে হাত না দিয়েই চিলের পেছনে দৌড়ে পশুতুল্য কিছু মানুষ দেশ জুড়ে অনায়াসে অজস্র মন্দির ও হিন্দু বাড়িঘর ভেঙ্গে ফেললো। কিছু মানুষের প্রাণহানিও ঘটলো। আবার দিনের শেষে দেখা গেল মুসলমান নামের এক ব্যক্তিই হনুমানের পায়ে কোরআনটি রেখেছিল হিন্দুদের সর্বনাশ ডেকে আনার জন্য, যেই লক্ষ্যে সেই ব্যক্তিটি সম্পূর্ণ সফল হলো।
সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো যে এই ধরণের ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। বাংলাদেশের এই সাম্প্রদায়িক পরিবর্তন বহু দিনের এবং ৭৫ সালের পর থেকেই সেটাকে কৌশলে পরিচালনা করা হয়েছে। ৭৫ সালের পর বলছি কেন? কারণ তারপরেই জেলারেল জিয়া ক্ষমতায় এসে সংবিধানে বিসমিল্লাহ বসিয়ে সংবিধানের ইসলামিকরণ শুরু করলেন। সংবিধানটা যেন শুধু মুসলমানদের। তিনি সংবিধানে আরো কিছু ইসলামী বিষয় ঢুঁকিয়েছিলেন যেগুলো শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর সংবিধান থেকে মুছে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু উপরে উল্লেখিত আবেগের ভয়ে তিনি সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ আর রাষ্ট্রধর্ম সরাননি। বাকিটা ইতিহাস। বাংলাদেশের আলেম সমাজ নিজেদেরকে অন্যদের তুলনায় কিছুটা ঊর্ধ্বে মনে করে এসেছে – তারাই রাজা, বাকিরা প্রজা। তারা অন্যায় করলে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে বাকিরা নারাজ – ইসলামের ক্ষতি হবে এই ভয়ে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনও তাদের ব্যাপারে মুখ ফিরিয়ে চলেছে যার ফলে কওমি মাদ্রাসাগুলোতে এত দিন ধরে ঘটে আসা বালক ধর্ষণ ও অন্যান্য নির্যাতন ছিল ধামাচাপা দেয়া।
আমার মতে বাংলাদেশের এই সাম্প্রদায়িক ও মুসলমান কেন্দ্রিক চেহারা সংবিধানে বিসমিল্লাহ এবং রাষ্ট্রধর্ম আসার পরেই জাগ্রত হতে শুরু করে। এবং এখান থেকে ধীরে ধীরে ফিরে আসার শুরুটাও করতে হবে সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ এবং রাষ্ট্রধর্ম সরিয়ে দিয়ে। এতে মানুষ রাতারাতি অসাম্প্রদায়িক হয়ে যাবে না, যেমনি মানুষ রাতারাতি সাম্প্রদায়িক হয়ে যায়নি। তবে অসাম্প্রদায়িক যাত্রার শুরুটা করা যাবে। বিভিন্ন বক্তব্যদাতা এবং সাংবাদিকরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য মুখে বড় বড় ফ্যানা তুলেন। কিন্তু আসল জায়গায় সকলে যেতে নারাজ। বিসমিল্লাহ এবং রাষ্ট্রধর্ম সরিয়ে ফেলার কথা বললে নিজের ধর্ম বিশ্বাসের ভিত্তি নড়ে যায়, এমন অবস্থা। তাই বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তারা হাওয়া বাতাস নিয়ে কথা বলেন। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশের বর্তমান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার অঙ্গীকার করে যেই বক্তব্যগুলো রেখেছেন সেটা উল্লেখযোগ্য। সরকার হয়তো এর মাধ্যমে জনমত যাচাই করার চেষ্টা করছে। আমার মতে তিনি এই বিষয়ে একটা ছোটখাটো ঢেউ তুলে দিয়ে গেছেন। আমাদের এখন উচিৎ বজ্রকণ্ঠে এই ঢেউটিকে হিমালয়ের সমান উঁচু করে ফেলা। এবং সেটা করতে হবে রাষ্ট্রের স্বার্থে, আমাদের সংবিধানের স্বার্থে, সকল ধর্মালম্বী এবং নাস্তিকদের সমান অবস্থানের স্বার্থে। বাংলাদেশের সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ এবং রাষ্ট্রধর্ম উঠিয়ে ফেলতে হবে। এই ব্যাপারে জনমত তৈরি করা আমাদের দায়িত্ব। জনমত তৈরি হলেই সরকার তা করবে। ধর্ম যার যার, সংবিধান সবার।
*********************
এবার আসি সমাজতন্ত্র নিয়ে। আগেই বলেছি যে প্রাতিষ্ঠানিক সাম্যবাদ একটি ব্যর্থ রূপরেখা। কিন্তু মানুষে মানুষে সাম্যতা একটি মহৎ আদর্শ। মুক্তবাজার অর্থনীতি বলবৎ রেখেই মানুষে মানুষে বৈষম্য কমিয়ে আনার রূপরেখা আমরা পাই পশ্চিমা ইউরোপের দেশগুলো থেকে। সেখানে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে “কল্যাণমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থা” যার ইংরেজি হচ্ছে ওয়েলফেয়ার স্টেইট (welfare state). এখানে সরকার বিত্তবান সহ সকল মানুষদের কাছ থেকে প্রগতিশীল কর (আয় অনুপাতে বেশি হারের কর) আদায় করে একটা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বহাল রাখে। এটা গড়ে তুলতে সময় লাগে। কিন্তু এর ফলে মানুষের কিছু মৌলিক চাহিদা পূরণ করা হয়। একেক পশ্চিমা দেশে এই সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি একেক রকম। আমার মতে বাংলাদেশে এটার পরিধি হওয়া উচিৎ সকলের জন্য সমানভাবে লভ্য উন্নত সরকারি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। মানুষের মাঝে বৈষম্য কমাতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থা অবশ্যই হতে হবে একমুখী, ধর্মনিরপেক্ষ এবং সমানভাবে লভ্য। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ব্যবসা আর চলবে না। আর যার অর্থ আছে শুধু সেই ভালো চিকিৎসা পাবে, সেটা অনৈতিক। এই ব্যবস্থা কায়েম করতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে প্রতি বছর বাজেটের ১০% উভয় ক্ষেত্রে ব্যয় করতে হবে। এই দুটো খাত ছাড়াও দরিদ্র, বৃদ্ধ, বিধবা, দিন মজুর, কৃষক, এদের জন্য অর্থনৈতিক নিরাপত্তা আরো জোরদার করতে হবে। বেকারদের নূন্যতম ভাতার কথাও চিন্তা করতে হবে। শেষের কয়েকটি প্রকল্প বাংলাদেশে বর্তমানে বিদ্যমান। এগুলোর পরিধি বাড়াতে হবে। জনগণের দায়িত্ব থাকবে সকলের ন্যায্য পরিমাণ কর কোষাগারে পৌছে দিতে একনিষ্ঠ হওয়া এবং প্রশাসনকে এই ব্যাপারে সহযোগিতা করা।
এই সমাজ ব্যবস্থায় একটি মানুষের ব্যক্তিগত অগ্রগতি কখনই নির্ভর করবে না তার অভিভাবকের অর্থের উপর। যার উপর তা নির্ভর করবে তা হচ্ছে তার মেধা, চেষ্টা ও শ্রম। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র বাধ্য থাকবে। বাকিটা তার নিজের উপর। কল্যাণমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থায় পেনশনের উপরেও জোর দিতে হবে বৃদ্ধ বয়সে কাওকে যেন তার সন্তানের উপর নির্ভর করতে না হয়। আমাদের সংবিধানে সমাজতন্ত্রের এরকম একটা ব্যাখ্যা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে দেয়া থাকতে হবে। বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র কায়েম করার পন্থা হবে একটা কল্যাণমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থা। তাহলেই বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়া নিয়ে পুঁজিবাদীদের আর আপত্তি থাকবে না, বামপন্থীরাও কথায় কথায় “পশ্চিমা বেনিয়া”, “পুঁজিবাদীদের আগ্রাসন” ইত্যাদি উচ্চারণ করে বাতাস ভারি করে ফেলবে না। বরং বাংলাদেশকে তার জন্মকালীন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে সকলেই একমত হতে পারবে।
**********************