
রিয়াজ ওসমানী
১৭ আগস্ট ২০২১
যদুঃ কী রে দোস্ত? কেমন আছিস?
বল্টুঃ এই তো আছি। বাহ! তোকে এখনো চির নবীন, চির সবুজ মনে হচ্ছে।
যদুঃ থাক, থাক। আর লজ্জা দিস না। তবে হ্যাঁ! অল্প বয়সে দেখতে ভালোই ছিলাম। নইলে কি আর বিয়ের আগে তিনটা বান্ধবীর সাথে নিয়মিত সেক্স করে বেড়াতে পারতাম?
বল্টুঃ হ্যাঁ! তুই আসলেই ভাগ্যবান। এখনো তোকে দেখে বিশ্বাসই হয় না যে তুই স্ত্রী সহ তিনটা সন্তানের বাপ।
যদুঃ আর বলিস নে! কোথায় ছিলাম আর আজ কোথায় এলাম। একটা সময় ছিল যখন সরকারের বেতনে সংসারই চলতো না। বাম হাতের ব্যাপার স্যাপার না থাকলে না খেয়ে মরতাম সবাই। আর এখন? ঘুষের টাকা জমিয়ে জুয়া খেলে খেলে আজ ভালো অর্থের মালিক হয়েছি। সব সময়েই ভয় ছিল জুয়া খেলতে খেলতে টাকা হারিয়ে ফেলি কি না। কিন্তু এখানে আমার কেমন যেন একটা দক্ষতা এসে গেল।
বল্টুঃ হ্যাঁ, তোর আসলেই প্রতিভা আছে বলতে হয়।
যদুঃ তা আছে তবে মাঝে মাঝে পাপের জন্য অনুশোচনা হয়। এত ঘুষ, এত জুয়া। কিন্তু কী করি বল! আমি তাই পাড়ার মসজিদ আর মাদ্রাসাগুলোতে নিয়মিত টাকা-পয়সা দেই। এতে কিছুটা হলেও প্রায়শ্চিত্ত হয় আর তাছাড়া আমার মহল্লায় আমাকে সবাই খুব শ্রদ্ধা করে, বিশেষ করে এখানকার হুজুর, ইমাম, এরা।
বল্টুঃ তুই খালি সুদর্শনই না, বুদ্ধিমানও বটে। কিন্তু একটা জিনিষ খেয়াল রাখিস। মাদ্রাসাগুলোতে যখন টাকা দিবি, তখন দেখে নিবি যে সেগুলো যেন আবাসিক না হয়। সব মাদ্রাসাতেই ছাত্রদেরকে জানোয়ারের মতো পেটানো হয় কিন্তু আবাসিক মাদ্রাসাগুলোতে রাতের বেলা বালকদেরকে ধর্ষণও করা হয়। তাই দেখে শুনে টাকা দিবি।
যদুঃ আরে ধ্যাত! এগুলো আমার জানার বিষয় না। সমাজে আমার নাম বলতে একটা জিনিষ আছে না? অনেক কষ্টে সেটা খাড়া করেছি। আর হুজুর, ইমাম, এরা তো ইসলাম ধর্মের বাহক। এদের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না। এরা সব কিছুর ঊর্ধ্বে।
বল্টুঃ একটা কথা জিজ্ঞেস করি? শুনলাম কিছু ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে তোরই কেউ একজন না কি ধরা পড়েছিল?
যদুঃ হ্যাঁ, কেন?
বল্টুঃ তুই কি শেষমেষ ইয়াবা খাওয়া শুরু করেছিস না কি?
যদুঃ আরে না! তোকে তো আগেই বলেছি যে আগামী দিনগুলোতে আমি রাজনীতি করবো। ইয়াবা খাইয়ে কিছু পেশিশক্তি হাতে রাখতে হবে না? মাস্তান ছাড়া রাজনীতি চলে?
বল্টুঃ একেবারেই না। তবে তুই কি সেই জন্যই বছরে একবার করে হজ্জ করতে আরম্ভ করেছিস?
যদুঃ হি হি! এত দিনে বুঝলি ব্যাপারটা? আর তাছাড়া পাপের বোঝা তো আর বাড়তে দিতে পারি না। আমি আর তোর ভাবী প্রতি বছর হজ্জে গিয়ে অন্তত আমার পাপের বোঝাটা কমিয়ে আনি। পাপ করে আল্লার কাছে আত্মসমর্পণ করলে আল্লাহ তো ক্ষমা করে দেনই। একই সুযোগে তোর ভাবী ও অন্যান্য সবার চোখে আমি চলতে থাকি ভালো মানুষ সেজে, নামের আগে “আলহাজ্ব” শব্দটা পোক্ত করে। ছেলেমেয়েদেরকেও ভর্তি করিয়েছি ইংরেজি মাধ্যমে। এরা দেশের কিছুই চিনে না। দেশ নিয়ে ভাবেও না। ওই আছে পশ্চিমের হালচাল নিয়ে।
বল্টুঃ উফ! তুই না! অসাধারণ সুখে আছিস! এমনিই থাকিস চিরকাল।
যদুঃ হ্যাঁ তা তো থাকবোই। এবার তোর কথা বল, শুনি।
বল্টুঃ কী আর বলবো? মাঝে মধ্যে নিজেকে বড় একলা মনে হয়।
যদুঃ বুঝতে পারছি বন্ধু। কীভাবে যে তোর আর মালার বিয়েটা ভেঙ্গে গেল! আচ্ছা তুই এত চিন্তা করিস না। কত মেয়েদের সাথেই তো তোর বন্ধুত্ব। তাদের সাথেই তো প্রচুর সময় কাটাতি – ওদের কাওকে নিশ্চয়ই পটাতে পারবি। তুই গত মাসে কাজের জন্য কিছু দিনের জন্য ঢাকার বাইরে চলে না গেলে আমি তোকে আমার একটা পার্টিতে দাওয়াত করতাম।
বল্টুঃ তাই না কি? কোন পার্টি?
যদুঃ বলেছিলাম না যে তোর ভাবী আমাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে দেশের বাড়ি চলে গিয়েছিল দুই সপ্তাহের জন্য তার অসুস্থ বাবার সাথে কিছু সময় কাটাতে? তখন পুরো একটা উইকেন্ড-এর জন্য আমার বাসায় তোর পরিচিত আমার বেশ কয়েকজন বন্ধু এসেছিল। সাথে এসেছিল তাদেরই পরিচিত অনেকগুলো মেয়ে (যুবতি) যারা বেশ ফুর্তি করতে পছন্দ করে। কী আর বলবো দোস্ত! দুই দিন ধরে বেশ মদ গিললাম আর আমি আর বন্ধুরা পালা করে প্রতিটা মেয়ের সাথে সেক্স করেছি। উফ! মনে হলো অনেক দিন পর যেন যৌবন ফিরে পেলাম।
বল্টুঃ বুঝলাম। তবে আমি সেই পার্টিতে আসতাম না।
যদুঃ কেন? তুই কি সন্ন্যাসী হয়ে গেলি না কি?
বল্টুঃ না তা না। তবে একটা ব্যাপার আছে যেটা তোকে আমি বলার সাহস পাচ্ছি না।
যদুঃ ও মা! আমার কাছ থেকে তুই কবে কোন জিনিষটা লুকিয়েছিস বল? আমাকে তুই চিরকাল বিশ্বাস করে আসিসনি? আমাকে তুই কোন জিনিষটা ভরসা করে বলিসনি? আমি কি সব সময়েই তোর সাথে ছিলাম না? কিচ্ছু ভাবিস না। আমাকে খুলে বল। কী হয়েছে তোর? ইরেক্টাইল ডিসফাঙ্কশন?
বল্টুঃ না, তেমন কিছু না। ইয়ে, মানে, ইয়ে, মানে আমি একজন সমকামী, মানে আমি গে।
যদুঃ কী বললি?
বল্টুঃ যা শুনলি তাই।
যদুঃ তোর মাথা ঠিক আছে তো? কী উল্টা পাল্টা বলছিস? তুই জানিস তুই আমাকে কী বলছিস?
বল্টুঃ জানবো না কেন? জেনেই তো বলছি।
যদুঃ তুই জানিস না ইসলামে এটা নাই?
বল্টুঃ অবশ্যই জানি। জানবো না কেন? কিন্তু মেয়েদের সাথে আমি তো সেক্স করতে পারি না। আমার পছন্দ ছেলেদেরকেই।
যদুঃ কী বললি? তুই ছেলেদের সাথে সেক্স করিস?
বল্টুঃ হ্যাঁ তাই। মালার সাথে আমি একদম শুতে পারতাম না। তার পায়ের গন্ধে আমার বমি আসতো। আর তার স্ত্রী জায়গাটার ধারে কাছেও যেতে পারতাম না। অথছ আমি তার স্বামী থাকা অবস্থায় সূর্য নামের ছেলেটার সাথে প্রায়ই রাত কাটিয়ে স্বর্গ খুঁজে পেতাম।
যদুঃ ছিঃ কী জঘন্য, কুৎসিত ব্যাপার! তোর মতো এরকম নিকৃষ্ট পাপী আর পতঙ্গের সাথে আমার এত দিনের বন্ধুত্ব্ব?
বল্টুঃ এভাবে বলিস না বন্ধু। সহ্য করতে পারছি না। কত দিন ধরে মনের ভেতর এই চাপা কষ্টটা পুষেছি। দিন গুনছিলাম কবে তোকে সব বলে নিজের মনটাকে একটু হালকা করবো। কারণ এটা ছাড়া আমি আর কোনো দিন তোর কাছ থেকে কিছু লুকাইনি। আমার হাতটা একটু ধরবি দোস্ত? দেখছিস না কেমন কাঁপতে শুরু করেছে? মনে হচ্ছে হুঁশ হারিয়ে ফেলবো এক্ষুণি।
যদুঃ খবরদার আমাকে ছুঁবিনা হারামজাদা! এক্ষুণি হাত সরিয়ে ফেল।
বল্টুঃ প্রাণের বন্ধুকে এগুলো বলতে পারলি?
যদুঃ তোর মুখে আগুন দিলাম হারামীর বাচ্চা। আমি তোর প্রাণের বন্ধু না। তুই আমার কেউ না। এরকম নিচু জানোয়ার বন্ধুর চেয়ে শত্রুরা অনেক ভালো। তবে এত দিন বন্ধু ছিলি বলে তোকে আমার কাছ থেকে চিরকালের জন্য সরে যেতে দিচ্ছি। নইলে এক্ষুণি আমার লোক ডেকে এনে তোর মতো পোদমারানিকে পিটিয়ে শেষ করে ফেলতাম। তারপর কেটে কেটে টুকরো করে আমার কুকুরগুলোকে খাওয়তাম। যা এখান থেকে!
*********************