
রিয়াজ ওসমানী
১৭ মে ২০২০
ঢাকা বিমানবন্দরে নামার পর টার্মিনাল ভবনের ভেতর যেই জিনিষটা আমাকে প্রথমে আমন্ত্রণ জানালো তা হলো স্পিকারে বাজানো আসর নামাজের আজান। অভিবাসন আর শুল্কের আনুষ্ঠানিকতা সেরে নিয়ে ভবন থেকে বের হবার সময় শুনলাম মাগরেবের আজান। কই, যাত্রী এবং তাদেরকে গ্রহণ করতে আসা আত্মীয়স্বজন কাওকেও তো দেখলাম না সব কাজ ছেড়ে দিয়ে কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে ফেলতে। সেটা হলে কিছুটা আশ্চর্যই হতাম। মনে করতাম আমার বিমান আমাকে ঢাকায় না নামিয়ে সৌদি আরবের কোনো শহরে নামিয়ে দিয়েছে।
মজার ব্যাপার কি জানেন? এই একই ভবনের ভেতরে আছে বিদেশি বিমান সংস্থাগুলোর কয়েকটা অভিজাত লাউঞ্জ যেখানে উচ্চ দামে টিকিট কেনা যাত্রীদেরকে বিনামূল্যে মদ জাতীয় পানীয় পরিবেশন করা হয়। এগুলো কিনে খাওয়ার জন্য বাকিদের জন্য একটা পানশালাও আছে। এই পুরো ব্যাপারটাকে কি একমাত্র আমিই হাস্যকর মনে করছি? প্রথম কথা হচ্ছে যে এত বার এই ভবন দিয়ে এসেছি, গিয়েছি – স্পিকারে আজান তো মনে পড়ছে না। এটা কি হিজাবের মতো বাংলাদেশের নতুন এক চল? এর উদ্দেশ্যটা কি? বিমানবন্দর তো নামাজ পড়ার জায়গা না। তাছাড়া এখান দিয়ে মুসলমানরা ছাড়াও আসা-যাওয়া করছে বিভিন্ন দেশের নাগরিক, বিভিন্ন ধর্মের অবলম্বনকারী অথবা ধর্মহীণ মানুষ। দীর্ঘ যাত্রার পর সবার উপর এই আওয়াজ চাপিয়ে দেয়ার মানেটা কি?
সবাইকে এটা দেখাতে, যে বাংলাদেশ একটা মুসলমান দেশ? এটা দেখিয়ে লাভটা কি হচ্ছে? এটা তো লুকানো যাচ্ছে না যে বাংলাদেশ নামক মুসলমান এই দেশটি দূর্নীতির আন্তর্জাতিক তালিকার উপরের দিকে, এই দেশে সুদের নিয়মেই ব্যাংকের লেনদেন হয়। তার উপর এই দেশে নারী, বালক ও বালিকাদের ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন ঊর্ধ্বের দিকে। আজান শুনিয়ে কি এই সব অপরাধ ঢেকে ফেলা হচ্ছে? আমি তো বলবো না! হিজাবের মতো এটাও একটা লোক দেখানো ধার্মিকতা। হিজাবটা যেমন ব্যক্তিগত পর্যায় লোক দেখানো ধার্মিকতা, ঠিক তেমনি বিমানবন্দর, বাস, ট্রেন, লঞ্চ ইত্যাদিতে আজান ও কোরআন তেলোয়াত হচ্ছে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে লোক দেখানো ধার্মিকতা।
এই লোক দেখানোর প্রবণতা তখনই আসে যখন সেটাকে বেশি করে দেখানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা হয়। অতি ভক্তি যেমন চোরের লক্ষণ, ঠিক তেমনি অতি ধার্মিকতা ভন্ডামির লক্ষণ। শাঁক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না। আকাশ পথে উড়াল দিয়ে ঢাকায় নেমে একতারা, দোতারা, বাঁশী বা সেতারের আওয়াজ না শুনতে পেয়ে আজানের আওয়াজ আমাকে শুনতে হবে জানলে হয়তো নিজের জন্মভূমি এত উচ্ছ্বাস নিয়ে বেড়াতে আসতাম না।